দাদীর ছোট বোনেরআমার মেয়ে আরমিন।।আরমিন
ফুপ্পি আমেরিকায়ে থাকেন। শুধু মাত্র বিজনেসর কাজে ওনার
বাংলাদেশে আসা হয়।। কয়েকমাস থাকার পর তিনি আবার চলে যান
আমেরিকায়।। গত বছর তিনি বেশ সময় নিয়েই দেশে এসেছিলেন।।
ওনার খুব কাছের একজন বান্ধুবি যার সাথে উনি ওনার
পড়ালেখা শেষ করেছেন, তার মা আরমিন ফুপ্পিকে খুবই পছন্দ
করতেন।।
এমন কি উনি বলতেন যে আরমিন ফুপ্পি ওনার দ্বিতীয়
মেয়।। সেই মহিলার উত্তরায় বিশাল বাড়ি রয়েছে।।
সেখানে মহিলা একা থাকতেন।। যতটুকু শুনেছি যে মহিলাটি অত্যন্ত
নামাযি এবং পরদানশিল ছিলেন।। কিন্তু অসুস্থতায়ে ভুগতে ভুগতে কয়েকমাস
আগে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। উনি জানতেন যে ওনার
কাছে আর বেশি সময় বাকি নেই, তাই মৃত্যুর আগে তিনি আরমিন
ফুপ্পি কে বলেছিলেন- আরমিন ফুপ্পি যতদিন বাংলাদেশে আছে ততদিন মহিলার
বাসায়ে থাকে।
এ বাসায়ে ফুপ্পি সম্পূর্ণ নিরাপদ থাকবেন। মৃত্যুর আগে এমন
একটি অনুরধ করায় ফুপ্পি তা নির্দ্বিধায়ে মেনে নিয়েছেন। কিন্তু মহিলাটি আরও
বলে গিয়েছিল যে – যেহেতু তুমি মেয়ে, তোমার একা থাকা মোটেই ঠিক হবে না,
অবশ্যই অন্য কাউকে নিয়ে থাকবে। আরমিন ফুপ্পি বলেছিলেন যে তিনি একাই
থাকতে পারবেন, ওনার অভ্যাস আছে, এর আগেও পরিবার
ছাড়া অনেক বার বাংলাদেশে এসে থেকেছেন।
কিন্তু মহিলাটি কোন ভাবেই
মেনে নিতে পারছিল না যে ফুপ্পি এ পুরো বাসাটিতে একা থাকবেন।
পরবরতিতে ফুপ্পি রাজি হলেন আরেকজনের সাথে থাকার, আর
তিনি হলেন আমার আপন ছোট ফুপ্পি- আরবা। আরবা ফুপ্পি প্রথমে এক
কথায়ে রাজি হয়ে গেলেন যে তিনি আরমিন ফুপ্পি কে সঙ্গ
দেওয়ার জন্য কিছুদিন ঐ বাসায়ে থাকবেন।
সেই বয়স্ক মহিলা মৃত্যুর
আগে যা জেনে গিয়েছিলেন তা হল- আরমিন এবং আরবা ফুপ্পি একসাথেই
থাকছেন এই বাসায়। তার ২-১ দিনের মধ্যেই মহিলাটি মারা যায়।
এবার ঘটনাটি একটু অন্যদিকে চলে যায়। আরবা ফুপ্পি কিছুদিন পর কিছু
অসুবিধার জন্য আরমিন ফুপ্পির সাথে থাকতে মানা করে দেয়।
তিনি আরমিন ফুপ্পির কাছে ওনার অসুবিধার কথা বললে আরমিন
ফুপ্পি বলেন যে কোন সমস্যা নেই, উনি একাই থাকতে পারবেন।
তা ছাড়া আর কিছু দিন ই তো! তারপর তো তিনি চলেই যাবেন।
এভাবে তিনি একাই থাকতে শুরু করেন এবং সবকিছুই স্বাভাবিকভাবে চলতে থাকে।
এর মাঝে একদিন আরবা ফুপ্পির বাসায়ে আরমিন ফুপ্পির দাওয়াত ছিল। আরমিন ফুপ্পি ঐ
বাসায়ে বেড়াতে যান এবং সবাই মিলে এক পর্যায় গল্পে জুড়ে যান।
আরবা ফুপ্পির শোবার ঘরের বিছানায় বসে ওনারা গল্প করেছিলেন। দুই ফুপ্পি তো ছিলেন
ই আরও ছিলেন আরবা ফুপ্পির ছেলের বউ এবং ওনার এক
বান্ধুবি। ওনাদের কথোপকথন চলতে থাকে, এক পর্যায় আরমিন
ফুপ্পি কথা প্রসঙ্গেই বলেন ওনার ঐ বাসায়ে একা থাকার কথা।।
আরবা ফুপ্পি সাথেসাথে বলেন- " আপা আসলেই আমি থাকতে চেয়েছিলাম, কিন্তু
কিছু সমস্যার কারণে পারলাম না! " এবার যা হল তা সত্যিই অবিশ্বাস যোগ্য।
একটা বীভৎস কণ্ঠে কে জানি বলে উঠল- "আপনি চুপ থাকেন... আপনি থাকার
সময় থাকলেন না, ওনাকে একা রেখে গেলেন ওই বাসায়ে, আর এখন এত বড় বড়
কথা বলছেন কি করে?" সবাই চমকে উঠল হটাত এ কথা শুনে,
কারন কথাটি যে বলছিল সে হল আরবা ফুপ্পির ছেলের বউ।। উপস্থিত সবাই খুবই অবাক হলেন
বউয়ের মুখে এমন কথা শুনে।। কিন্তু আরমিন ফুপ্পি স্বাভাবিক
ভাবেই জিজ্ঞেস করলেন ওকে -" তুমি এত কিছু জান কি করে?
যা হবার হয়েছ, এখন আমার সাথে কারও থাকার দরকার নেই,
আর তোমাকে না বলেছিলাম আমার বাসায়ে এসে একদিন ঘুরে যেতে?
এখনও তো নতুন বউকে আমার ঐ বাসায়ে একদিন নিতেও পারলাম
না!" মায়েশা অর্থাৎ আরবা ফুপ্পির বউ মাথা নিচু করে উত্তর দিল- "
কে বলেছে আমি যাই নাই আপনার বাসায়?? আমি তো প্রতিদিন
কত্তবার যাই, এইত এইমাত্রই তো ঘুরে আসলাম ওখান থেকে,
আপনার বাসা সাজানো আমার খুব ই ভাল লেগেছে" বলে ও চুপ
করে নিচেই তাকিয়ে থাকল। আরবা ফুপ্পি খুব ই অবাক হলেন
এবং চিন্তা করতে থাকলেন, মেয়ে বলছে কি? ও তো জানতই
না যে আমার ওইখানে গিয়ে থাকার কথা ছিল
কিন্তু আমি পারি নি।। তাহলে ও এখন এত কিছু জানল কিভাবে!! আর
ও তো কোনোদিন ঐ বাসায় যায় নি, তাহলে এগুলো কি বলছে!
আরমিন ফুপ্পি কিছুক্ষন পর বলল আমার মাথা খুব ব্যাথা করছে আমাকে কোন
মেডিসিন থাকলে দাও। মায়েশা সাথে সাথে বলল আমি দিচ্ছি। আরবা ফুপ্পি আরমিন
ফুপ্পির মাথা টিপে দিতে চাইলে হথাত মায়েশা তার হাত সরিয়ে দেয়,
এবং বলে আপনি ওনাকে ধরবেন না।। আরবা ফুপ্পি ওনার
বান্ধুবির দিকে তাকালে দেখলেন যে বান্ধুবি পুরো স্তব্ধ হয়ে রয়েছে।।
সে একটা টু শব্দও করল না।। মায়েশা আরমিন ফুপ্পির সাথে খুব ভাল ব্যাবহার
করছিল তাই আরমিন ফুপ্পি খুবই খুশি হলেন। কিন্তু যখন ই আরবা ফুপ্পি আরমিন ফুপ্পির
সাথে কথা বলতে যান মায়েশা তাকে আটকিয়ে দিচ্ছিল। রাগ
হয়ে আরবা ফুপ্পি মায়েশাকে বলে - তুমি আপাতত এখান থেকে যাও।।
এ কথা বলায় ও খুবই রাগ হয়ে যায়, এবং মাথা নিচু করেই পুরো ৪৫ মিনিট ও নিজেই
একনাগারে কথা বলতে থাকে। রুমে উপস্থিত সবাই ওর দিকে তাকিয়ে থাকে, ওর
কথা খুবই অন্যরকম লাগছিল, ও বারবারই আরবা ফুপ্পি কে আঘাত
করে কথা বলছিল।। আরবা ফুপ্পি কাজের মেয়েকে এক
গ্লাস পানি নিয়ে আসতে বলে। উনি মায়েশা কে দেখেন যে ও একবার ও মাথা তুলে ওনার
দিকে তাকায় নি। পুরো সময় নিচু করে রেখেছে এবং কোন ভাবেই
অর চোখের অনুভূতি দেখতে দিচ্ছিল না।। উনি শুধু ওকে বলে-
মায়েশা তুমি বিছানার সামনের চেয়ারটায় এসে বস, এবং তিনি আয়তুল কুরসি পড়া শুরু
করলেন। মায়েশার মদ্ধে কেমন একটা পরিবর্তন লক্ষ করা যায়।।
ও খুবই ছটফট করতে থাকে এবং খুব নিচু কণ্ঠে বলতে থাকে মা খুব
খারাপ লাগছে। আরবা ফুপ্পি ওর হাত ধরে আয়তুল কুরসি পরতেই
থাকেন একনাগারে। অনেক্ষন ছটফট করার পর ও অজ্ঞ্যান
হয়ে পরে। পরবরতিতে অর জ্যান ফিরলে ওকে যখন জিজ্ঞেস
করা হয় ও তখন খুব সাভাবিকভাবেই বলে যে ওর কোন কিছুই মনে নেই।
মুলত ঐ দিন যা হয়েছিল তা দুই ফুপ্পি ঐখানেই বুঝতে পেরেছিলেন। আরমিন
ফুপ্পি ঐ রাতে ওনার বাসায়ে গিয়ে আরবা ফুপ্পিকে ফোন করেছিলেন। তিনি বলেছেন
যে তিনি বুঝতে পারেন তার সাথে এই বাসায় আরেকজন ও থাকে।
মাঝেমাঝে সে যে আশপাশে আছে তা তিনি অনুভব ও করতে পারেন।
আর শুধু বাসায় না সে ফুপ্পির সাথে সবজায়গায় যায়।। ঐদিন
মায়েশার উপর কোন অশরীরী কছু ভর করেছিল, শুধু মাত্র তার রাগ
ঝাড়ার জন্য। সেইটি ঐ মহিলারই ছায়া, কেননা আর কেও এত গভীর
ভাবে ঐ বাসায় থাকার কথাটা জানত না এবং আরবা ফুপ্পির উপর তার
রাগ একটি কারনেই। কারন সে জানত আরবা ফুপ্পি আরমিন ফুপ্পির সাথে থাকবে,
কিন্তু তার মৃত্যুর পর আরবা ফুপ্পি আর থাকেন নি।।
No comments:
Post a Comment