NEWS

বাংলায় তুলি প্রযুক্তির সুর

30 Nov 2012

মার্কিন প্রেসিডেন্টদের যত কেলেঙ্কারি


মার্কিন প্রেসিডেন্টদের যত কেলেঙ্কারি

মার্কিনিদের মনে করা হয় বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর জাতি। আর তাদের দেশের প্রেসিডেন্ট সেই হিসেবে বিশ্বের ক্ষমতাধর মানুষ হবেন_ এটাই স্বাভাবিক। আর সমগ্র বিশ্বের মানুষের তাদের নিয়ে আগ্রহ থাকাটাও অস্বাভাবিক নয়। সঙ্গত কারণেই আমেরিকান প্রেসিডেন্টদের সম্পর্কে সবার আগ্রহের পরিমাণটা একটু বেশিই। কিন্তু যত যাই হোক মার্কিন প্রেসিডেন্টরাও রক্ত-মাংসের মানুষ। যেহেতু মানুষ মাত্রই ভুল, তাই প্রেসিডেন্টেরও ভুল হতে পারে। ইতিহাসও এরকমটাই সাক্ষী দিচ্ছে। যুগে যুগে মার্কিন প্রেসিডেন্টরা বহু ঘটনা-দুর্ঘটনার জন্ম দিয়েছেন। তাদের কেন্দ্র করে স্ক্যান্ডালের কোনো শেষ নেই। তাদের নিয়ে বিশ্বজুড়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। মার্কিন প্রেসিডেন্টদের মানবিক ভুলগুলো ইতিহাসে বেশ কিছু কেলেঙ্কারির জন্ম দিয়েছে। আর এসব কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়ানো কোনো না কোনো প্রেসিডেন্টের নাম।

আজ আমরা এমনই এক ডজন কেলেঙ্কারির গল্প শুনবো।

০১ –ওয়াটারগেট
যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সদর দফতর ওয়াশিংটনের ওয়াটারগেট নামক স্থানে। ১৯৭২ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় ওই সদর দফত
রেই ডেমোক্র্যাটিক দলের নির্বাচনী প্রচারণা, পরিকল্পনা এবং অন্যান্য আলাপ-আলোচনা করা হতো। তৎকালীন ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান দলের প্রার্থী ছিলেন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিঙ্ন। আর ডেমোক্র্যাটদের সব নির্বাচনী পরিকল্পনা নিঙ্ন ও তার সহযোগীরা আড়ি পেতে শোনা এবং টেপ করে নেওয়ার যে নোংরা পদ্ধতি অবলম্বন করে তা পরবর্তীতে ফাঁস হয়ে যায়। এতে বিশ্বজুড়ে হৈচৈ শুরু হয়। সবাই এমন কীর্তির জন্য প্রেসিডেন্ট নিঙ্নের তীব্র সমালোচনা করেন। এরই ফলশ্রুতিতে ১৯৭৪ সালের ৯ আগস্ট নিঙ্ন প্রেসিডেন্টের পদ ত্যাগ করতে বাধ্য হন। ভিয়েতনাম শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর, মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তিপ্রচেষ্টা এবং রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কোন্নয়নসহ আরও অনেক সাফল্যজনক কাজ থাকলেও এই ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি নিঙ্নের রাজনৈতিক জীবনের এক কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবে রয়ে যায়। তবে ঘটনার ৩৬ বছর পর এবং মৃত্যুর ১৭ বছর পর এই কেলেঙ্কারির অভিযোগ থেকে মুক্তি পান তিনি। ইতিহাসবেত্তা স্ট্যানলি কাটলারের এক অনুরোধে বিচারক রইস ল্যামবার্থ বহুল আলোচিত ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির ঘটনায় সাবেক প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিঙ্নের দেওয়া সাক্ষ্যের নথিপত্র প্রকাশ না করায় নিঙ্নকে এ অভিযোগ থেকে মুক্তি দেন ওই বিচারক।

০২- মনিকাগেট
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ও আলোচিত নারী কেলেঙ্কারির ঘটনাটি ঘটে প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের সময়।

উইলিয়াম জেফারসন ক্লিনটন ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪২তম প্রেসিডেন্ট। তিনি বর্তমান ওবামা প্রশাসনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের স্বামী। তিনি ক্ষমতায় থাকাকালে ১৯৯৮ সালে মনিকা লিউনস্কির সঙ্গে যৌন কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে দারুণ বিপাকে পড়েছিলেন। ১৯৯৫ সালে মনিকা লিউনস্কির বয়স যখন ২২ বছর তখন ক্লিনটনের সঙ্গে তার সম্পর্ক তৈরি হয়। তাদের প্রেম বিশ্বব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি করে।

প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের সঙ্গে হোয়াইট হাউসের কর্মচারী মনিকা লিউনস্কির রসালো প্রেম কাহিনী জনসমক্ষে প্রকাশিত হওয়ার পর সবাই নড়েচড়ে বসেন। কারণ ওটাই ছিল ক্ষমতাসীন কোনো প্রেসিডেন্টের এরকম নারী কেলেঙ্কারির প্রথম ঘটনা। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনকে ইমপিচমেন্টের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। তিনি যা করেছেন তা যদিও বেআইনি নয়। কেননা লিউনস্কি প্রাপ্তবয়স্কা। দুজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ও মহিলার সম্পর্ক হয়ে উঠতেই পারে। ক্লিনটনের বিষয়টি যতটা না ছিল স্ক্যান্ডাল, তার চেয়ে অনেক বেশি চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছিল রাজনৈতিক অঙ্গনে। তবে রাজনৈতিক চড়াই-উতরাইয়ে যতটা না বেগ পেতে হয়েছে, সে রকমটা হয়নি সাধারণ মানুষের বেলায়। আশ্চর্যজনকভাবে মার্কিন জনগণ ছিল ক্লিনটনের প্রতি দারুণ সহানুভূতিশীল। কারণ সে সময় মার্কিন অর্থনীতির অবস্থা ছিল খুবই ভালো এবং বেকারত্বের হার ছিল নূ্যনতম পর্যায়ে। ফলে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে একটা পজিটিভ রেসপন্স আদায় করে নিতে পেরেছিলেন ক্লিনটন।

১৯৯৫ সালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে চাকরি পায় লুইস এবং ক্লার্ক কলেজ গ্র্যাজুয়েট সুন্দরী মনিকা লিউনস্কি। প্রেসিডেন্ট ক্লিনটন তখন সপরিবারে এই রাজকীয় প্রাসাদে বাস করতেন। ২২ বছরের সুন্দরী মনিকার সঙ্গে অল্প সময়ের মধ্যেই সখ্য গড়ে ওঠে প্রেসিডেন্ট ক্লিনটনের। এক পর্যায়ে দুজনের মধ্যে প্রণয়ের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। গভীর প্রণয় চলাকালে মনিকা এবং ক্লিনটন নিয়মিত অভিসারে মিলিত হতেন। তাদের প্রেম এতটাই রসালো ছিল যে তারা হোয়াইট হাউসেই ৯ বার গোপন অভিসারে লিপ্ত হন। তার চেয়ে আশ্চর্যের বিষয় এর মধ্যে পাঁচবার এ রকম অভিসারের সময় ক্লিনটনের স্ত্রী হিলারি ক্লিনটন হোয়াইট হাউসেই ছিলেন। কিন্তু তাদের এ অভিসারের খবর হিলারি তো দূরের কথা কাকপক্ষীও টের পায়নি। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে চাকরির সুবাদে মনিকার সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে তার সহকর্মী লিন্ডা ট্রিপের। আলাপচারিতার এক পর্যায়ে মনিকা তার বিশ্বস্ত বন্ধু ও সহকর্মী লিন্ডাকে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তার গোপন অভিসারের কথা জানান। ট্রিপ মনিকাকে এ সংক্রান্ত প্রমাণ ধরে রাখতে নানা পরামর্শ দেন। এখানেই ভুলটা করে বসেন মনিকা। গোপন কথা গোপনই রাখতে হয়।

এই স্ক্যান্ডালের খবর প্রথম প্রকাশ্যে আসে ১৭ জানুয়ারি ১৯৯৮ সালে ড্রাজ রিপোর্ট ওয়েবসাইটে। এ বছরেরই ২১ জানুয়ারি দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট তাদের প্রধান প্রতিবেদন হিসেবে এই স্ক্যান্ডালের খবর প্রকাশ করে। এ প্রতিবেদনে জনগণের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। উপায়ান্তর না দেখে ক্লিনটন স্ত্রী হিলারিকে সঙ্গে নিয়ে হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে সব অস্বীকার করেন। মনিকাও দাবি করেন যে ঘটনা মিথ্যা এবং ট্রিপ ব্যক্তিগত স্বার্থ উদ্ধারের জন্য এ অভিযোগ উপস্থাপন করেছেন। এদিকে ট্রিপের কাছে মনিকা এবং ক্লিনটনের প্রেমালাপের গোপন টেপ সংরক্ষিত ছিল। বাধ্য হয়ে ট্রিপ সেটা তদন্ত কর্মকর্তা কেনেথ স্টারকে প্রদান করেন। কেনেথ এটি পরীক্ষা করে বলেন, এ ঘটনা সত্য। অন্যদিকে নিরুপায় হয়ে মনিকা গ্র্যান্ড জুরির কাছে তার সঙ্গে ক্লিনটনের শারীরিক সম্পর্ক থাকার কথা স্বীকার করেন এবং তার কাছে সংরক্ষিত নীল বস্ত্র তদন্ত কর্মকর্তাকে প্রদান করেন। তদন্ত কর্মকর্তা এই নীল বস্ত্র পরীক্ষা করে বলেন, এ অভিযোগ সম্পূর্ণ সত্য এবং ক্লিনটনের দাবি মিথ্যা। অতঃপর বিচারক সুসান ডি ওয়েবার মিথ্যা কথা বলার জন্য প্রেসিডেন্টকে ৯০ হাজার ডলার জরিমানা করেন।

এ ঘটনা সত্য প্রমাণিত হওয়ার পর সিনেট সদস্যরা প্রেসিডেন্টের নৈতিক মান নিয়ে প্রশ্ন তুলে তাকে ইমপিচমেন্টের দাবি করেন। ক্লিনটনের ডেমোক্র্যাটিক পার্টির অনেক সদস্য ও বিরোধী রিপাবলিকানরা এ দাবি সমর্থন করেন। ফলে সিনেটে এ বিষয়ে ২১ দিন ধরে তুমুল বিতর্ক হয়। অবশেষে ভোটাভুটিতে ক্লিনটন জয় লাভ করেন। অর্থাৎ এ যাত্রায় প্রেসিডেন্ট ইমপিচমেন্টের হাত থেকে রক্ষা পান। হিলারি ক্লিনটন পুরো ঘটনায় স্বামীর পাশে থেকে স্বামীর মনোবল জোগান। পুরো ঘটনাটি মার্কিন ইতিহাসে মনিকাগেট কেলেঙ্কারি হিসেবে পরিচিত।

০৩ -টিপট গম্বুজ
মার্কিন প্রেসিডেন্টদের আরেকটি কেলেঙ্কারি ছিল টিপট গম্বুজ শীর্ষক স্ক্যান্ডালটি। এটি ছিল ওয়ারেন জে হার্ডিং প্রশাসনের একটি বড় ধরনের দুর্নীতির ঘটনা। ১৯২১ সালে হার্ডিঞ্জ নৌ তেল সংরক্ষিত এলাকার নিয়ন্ত্রণ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে স্থানান্তর করেন। [পরবর্তীতে অবশ্য সুপ্রিমকোর্ট রুল জারি করে সেটি স্থগিত করেন]। হার্ডিঞ্জের এ সিদ্ধান্তের পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সেক্রেটারি আলবার্ট বি ফলস তার নতুন ক্ষমতাকে ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির জন্য ব্যয় করেন। তিনি ম্যামথ তেল কোম্পানিকে টিপট গম্বুজটির দায়িত্ব হস্তান্তর করেন বিপুল পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে। এ ঘটনা খুব বেশি দিন চাপা থাকেনি। ১৯২৪ সালেই এ ঘটনা দুনিয়ার কাছে ফাঁস হয়ে যায়। যদিও এর আগেই হার্ডিঞ্জ দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন, তারপরও অফিস সেটি খুব ভালোভাবেই গ্রহণ করে এবং এ কেলেঙ্কারিটি বিশ্বজুড়ে দারুণ আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি করে।

০৪-ইরান-কন্ট্রা
১৯৮৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গোপনে ইরানের কাছে বেশ কিছু অস্ত্র বিক্রি করে এবং তা থেকে প্রাপ্ত অর্থ নিকারাগুয়ার তৎকালীন সরকারবিরোধী কন্ট্রা বিদ্রোহীদের কাছে পাচার করে। যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্রভর্তি প্রথম বিমানটি ১৯৮৭ সালের আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে ইসরায়েলের মাধ্যমে ইরানে পেঁৗছানো হয়। এ কেলেঙ্কারির কারণে কিছু উচ্চপদস্থ মার্কিন কর্মকর্তা প্রশাসন থেকে বিদায় নেন। তাদের মধ্যে তৎকালীন প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র ল্যারি স্পিকস, রাজনৈতিক পরিচালক মিথ ড্যানিয়েল, সিআইএ প্রধান উইলিয়াম ক্যাসি, হোয়াইট হাউস কমিউনিকেশন ডিরেক্টর প্যাট্রিক বুচানন, স্টাফ প্রধান ডোনাল্ড রিগ্যান, নিরাপত্তা উপদেষ্টা ম্যাকফার্লেনও ওই কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রিগ্যান সিনেটর জন টাওয়ার কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিশনের প্রদত্ত রিপোর্টে বলা হয়, পদচ্যুত জাতীয় নিরাপত্তা সহকারী অলিভার নর্থ সব তৎপরতার নায়ক ছিলেন। অবশ্য পরবর্তীতে প্রেসিডেন্ট রিগ্যান স্বীকার করেন, ইরানে মার্কিন জিম্মিদের মুক্তির বিনিময় তিনি গোপনে এ চুক্তি অনুমোদন করেছিলেন। এটি যে ভুল ছিল তা তিনি নিজেই পরবর্তীতে স্বীকার করে নেন।

০৫ - হুইস্কি রিং
১৮তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইউলিসিস এস গ্রান্টের সময়কে ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্নীতিপরায়ণ বলে মনে করা হয়। তার শাসনামলে [১৮৬৯-১৮৭৭] মার্কিন ইতিহাসের দুটি বড় ধরনের কলঙ্কজনক ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে দ্বিতীয়টি ছিল হুইস্কি রিং স্ক্যান্ডাল। আর এই স্ক্যান্ডালের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ইউলিসিস এস গ্রান্টের মন্ত্রিসভার অনেক সদস্য ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এমনকি তার ব্যক্তিগত সহকারী পর্যন্ত জড়িত ছিলেন। হুইস্কি ডিস্ট্রিলারের মধ্যে কর ফাঁকি ও ঘুষ গ্রহণের এ কলঙ্কের ফলে প্রেসিডেন্টের যুদ্ধবিষয়ক সেক্রেটারি উইলিয়াম পদত্যাগে বাধ্য হন। প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধেও ইমপিচমেন্টের অভিযোগ ওঠে। কিন্তু এসব কিছু প্রমাণের আগেই তিনি পদত্যাগ করেন।

০৬ -জেফারসন ও শেলি
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের মতো অতটা আলোচিত ও রগরগে না হলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট টমাস জেফারসন ও শেলি হামিংয়ের মধ্যকার সম্পর্ক ছিল মার্কিন প্রেসিডেন্টদের মধ্যে প্রথম কোনো যৌন কেলেঙ্কারির ঘটনা। আর এ ঘটনাটি এমনই আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয় যে, এ সংক্রান্ত গল্প এখনো মানুষ চর্চা করে। ১৮০২ সালে জেফারসনের চাকরানি শেলী তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পর্ক স্থাপন ও একটি সন্তানের পিতৃত্ব রক্ষার দাবি নিয়ে হাজির হন। জেফারসন এসব কিছুই অস্বীকার করেন এবং পরবর্তী ৭ বছরের জন্য প্রেসিডেন্টের ক্ষমতায় আসীন হন। তখনও এ নিয়ে বিতর্ক চলছিল। সব বিতর্কের অবসান ঘটিয়ে ১৯৯৮ ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে শেলির অভিযোগটি প্রমাণিত হয় এবং জেফারসন শেলির একটি সন্তানের ভরণপোষণে বাধ্য হন।

০৭ - ক্রেডিট মবিলিয়ার
এ কেলেঙ্কারিটিও ১৮তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইউলিসিস এস গ্রান্টের সময়ের একটি ঘটনা। তার সময়ের অধিকাংশ ঘটনাই ছিল ভয়াবহ দুর্নীতির ঘটনা। আর এসব দুর্নীতির ঘটনার সঙ্গে সরকারের উচ্চ পদের অধিকাংশ কর্মকর্তাই জড়িত থাকতেন। ক্রেডিট মবিলিয়ারের ক্ষেত্রেও ঘটনা অন্যরকম ছিল না। এটি ছিল প্রথম বড় ধরনের কেলেঙ্কারি, যা কিনা গৃহযুদ্ধের দামামা বাজিয়ে তুলেছিল। ১৮৬৭ সালের দিকে উচ্চপদস্থ কিছু রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান ক্রেডিট মবিলিয়ার কোম্পানির থেকে কমদামে স্টক কেনে। এ কোম্পানিটি প্রশান্ত মহাসাগরীয় রেলপথ নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত ছিল। পরবর্তীতে কংগ্রেসম্যানরা এ কোম্পানির অনুকূলে ভর্তুকি এবং অন্যান্য বরাদ্দের পরিমাণ বাড়িয়ে দেন। এর উদ্দেশ্য ছিল কেবল নিজেদের পকেট ভরা।

০৮ - পেট্রিকোট অ্যাফেয়ার
এটি প্রায় ভুলতে বসা একটি কেলেঙ্কারির ঘটনা, যা কিনা যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বিখ্যাত প্রেসিডেন্ট এন্ড্রু জ্যাকসনের সময় ঘটেছিল। এর শুরুটা হয়েছিল জ্যাকসনের যুদ্ধবিষয়ক মুখপাত্র জন হেনরি এটনের বিয়ের মাধ্যমে। তিনি মার্গারেট টিম্বারলেক নামে একজন সদ্যবিধবাকে বিয়ে করেছিলেন, যার স্বামী কিছুদিন আগেই আত্দহত্যা করেছেন। এ বিয়েটি যুক্তরাষ্ট্রের অভিজাত সোসাইটির একটি বিশেষ দিকের ব্যাপারে সবার আঙ্গুল তাক করে। কারণ জোর গুজব ছিল বিয়ের আগে থেকেই এটনের সঙ্গে টিম্বারলেকের অবৈধ সম্পর্ক ছিল এবং এই অবৈধ সম্পর্কের কারণেই টিম্বারলেকের স্বামী আত্দহত্যা করতে বাধ্য হয়েছিলেন। এ নিয়ে যখন জল্পনা-কল্পনা তুঙ্গে, তখন প্রেসিডেন্ট এন্ড্রু জ্যাকসনের মন্ত্রিসভার অধিকাংশ সদস্য এটনের বিরুদ্ধে চলে যায়। কিন্তু এরপরও এন্ড্রু জ্যাকসন এটনকে সমর্থন দিলে বিতর্কের জন্ম হয় এবং এটনের মন্ত্রিসভার অধিকাংশ সদস্য এর ফলে পদত্যাগ করেন। জনসন এরপরও এটনকে সমর্থন দিয়ে গেছেন, যেটি ইতিহাসে একটি বিতর্কিত বিষয় হিসেবে রয়ে গেছে। পুরো বিষয়টি পেট্রিকোট অ্যাফেয়ার নামে পরিচিত।

০৯ - অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের বিয়ে
প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে ১৯৭১ সালে অ্যান্ড্রু জ্যাকসন র্যাচেল ডোনেলসন নামক এক মহিলাকে বিয়ে করেছিলেন। তার আগেও বিয়ে হয়েছিল এবং ধারণা করা হয়েছিল যে আইনসম্মতভাবে তার বিয়ে বিচ্ছেদ হয়েছে। কিন্তু জ্যাকসনের সঙ্গে বিয়ের পর তিনি দেখলেন ঘটনা আসলে তা নয়। র্যাচেলের স্বামী তার স্ত্রীর ব্যভিচারের বিরুদ্ধে আইনগত অভিযোগ উত্থাপন করেন। তখন জ্যাকসন আবিষ্কার করেন র্যাচেলের আইনসম্মতভাবে বিয়ে বিচ্ছেদ হয়নি। সে ক্ষেত্রে জ্যাকসন র্যাচেলকে বৈধভাবে বিয়ে করার জন্য ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতো। যদিও এটি ছিল প্রায় ৩০ বছরের পুরনো একটি ঘটনা, এরপরও ১৮২৮ সালের নির্বাচনে এ ঘটনাটি তার বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়। পরবর্তীতে র্যাচেলের অকাল মৃত্যুর জন্যও অ্যান্ড্রু জনসনকে দায়ী করা হয়।

১০ - গ্রোভারের অবৈধ সন্তান

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থিতার সময় থেকেই গ্রোভার ক্লেভল্যান্ডকে একটি কলঙ্কের বোঝা মাথায় বয়ে বেড়াতে হয়েছে। পরবর্তীতে প্রকাশ পায় যে মারিয়া সি হপলিন নামের এক বিধবার সঙ্গে গ্রোভার ক্লেভল্যান্ডের সম্পর্ক ছিল এবং তাদের একটি সন্তানও হয়েছিল। মহিলা দাবি করেন ক্লেভল্যান্ডই এ শিশুটির পিতা এবং তিনি ছেলেটির নাম রেখেছিলেন অস্কার ফুলসোম ক্লেভল্যান্ড। গ্রোভার ক্লেভল্যান্ড অবশ্য শিশুটির পিতৃত্ব অস্বীকার করেননি। শিশুটিকে তিনি একটি এতিমখানায় পাঠিয়ে দেন। পুরো ব্যাপারটিতে ক্লেভল্যান্ডের সততা ও সত্যবাদিতা ছিল চোখে পড়ার মতো। তখন মার্কিন নির্বাচনে ক্লেভল্যান্ডের বিরুদ্ধে এ ঘটনাটিকে ব্যবহার করা হলেও শেষ পর্যন্ত তিনিই বিজয়ী হন।

১১ - উড্রো উইলসনের প্রেম
মার্কিন প্রেসিডেন্টদের কেলেঙ্কারির যত ঘটনা আছে, তার মধ্যে যৌনবিষয়ক ঘটনা কম ছিল না। কল্যাণমূলক ভাবনা ও প্রথম বিশ্বযুদ্ধে বিশেষ ভূমিকা রাখা মার্কিন প্রেসিডেন্ট সমাজবিজ্ঞানী উড্রো উইলসনও কেলেঙ্কারির বাইরে ছিলেন না। তবে তার ক্ষেত্রে বিষয়টি মোটেও যৌন বা এরকম কিছু ছিল না। এটি ছিল কেবলই একটি এনগেজমেন্টের ঘটনা। তার প্রথম স্ত্রী এলেন লুইস অ্যাসন ১৯১৪ সালে মৃত্যুবরণ করেন। এর পরের বসন্তে উড্রো উইলসনের সঙ্গে এডি গাল্টের দেখা হয় এবং দুজনের মধ্যে একটি হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয়। এমনকি ধারণা করা হয়, তাদের এনগেজমেন্ট পর্যন্ত হয়ে গিয়েছিল। তবে বিতর্কের সূত্রপাত ছিল এখানে যে স্ত্রী থাকাকালীন থেকেই তাদের মধ্যে সম্পর্ক ছিল। পরবর্তীতে সেটাকে শুধু জনসমক্ষে আনা হয়। অনেকের ধারণা, গাল্টকে বিয়ে করার জন্য প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন তার প্রথম স্ত্রীকে হত্যা করেছিলেন।

১২ - জন এফ কেনেডি
মার্কিন প্রেসিডেন্টদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুজব ছড়িয়েছে সম্ভবত জন এফ কেনেডির সময়। তার সময়ে ট্যাবলয়েড পত্রিকার গুজবগুলো সম্পর্কে কম-বেশি সবারই জানা আছে। তাকে সব সময়ই নারীঘেঁষা পুরুষ বলে মানা হতো। ১৯৫৩ সালে জ্যাকুলিনকে বিয়ে করার আগ পর্যন্ত কেনেডির গার্লফ্রেন্ডের কোনো লাগাম ছিল না। অবশ্য বিয়ের পরও অন্য নারীর প্রতি কেনেডির দৃষ্টির কোনো পরিবর্তন হলো না। তিনি মহিলাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চাইতেন এবং তাদের হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণও জানাতেন। তবে তার সময়ে বড় কোনো কেলেঙ্কারির ঘটনা ওইভাবে প্রকাশ না পেলেও তার এই ছোক ছোক স্বভাবের কথা অল্প সময়ের মধ্যেই চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে এবং আলোচনার জন্ম দেয়।

সুত্র- বাংলাদেশপ্রতিদিন। 

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad