প্রাণীদের কান্না রহস্য
একটানা কিছুক্ষণ কুমিরকে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে,
খানিক পর পর কুমিরের চোখ থেকে টপটপ করে স্বচ্ছ অশ্রু ঝরে পড়ছে। এই বিস্ময়কর ব্যাপারটি
নিয়ে মানুষ একসময় তাদের মনগড়া ব্যাখ্যা দিত। বলতো- বেঁচে থাকার তাগিদে কুমিরকে শিকার
ধরে খেতে হয়, কিন্তু শিকারের অকাল মৃত্যুতে কুমির নিজেই শোকাহত হয়।
সেই শোকেই কুমির
কান্না করে। এভাবেই কুম্ভিরাশ্রু কথাটির উৎপত্তি এবং আজও সেই একই অর্থে টিকে আছে। কপট
দুঃখ বা ভণ্ডামিপূর্ণ আচরণ বোঝাতে কুম্ভিরাশ্রু বা CROCODILE TEARS শব্দ প্রয়োগ করা
হয়। তবে মানুষের এই ব্যাখ্যা যে একবারেই মনগড়া তা বহু আগেই প্রমাণ করেছেন বিজ্ঞানীরা।
কুমির কাঁদে কেন? আসলে কুমির কাঁদে না। এটি একটি শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়াকলাপ।
সাধারণত খাদ্য গ্রহণের পর কুমিরের কান্নার বেগ বেড়ে যায়।
বিংশ
শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে, বিশেষ করে
ইউরোপীয় বিজ্ঞানীরা
শারীরতত্ত্ব বিষয়ে
প্রভূত উন্নতি সাধন করেন, যার ফলে
প্রাণীদেহের অনেক বিস্ময়কর ক্রিয়াকলাপ এখন আর মানুষের অজানা নয়।
এরকমই একটা ক্রিয়াকলাপ হলো কুমিরের কান্নার আসল কারণ।
ব্যাপারটা হলো, প্রাণীদেহের জন্য লবণ একটি অপরিহার্য পদার্থ। তবে দেহযন্ত্রের জন্য অতি সামান্য
লবণের প্রয়োজন হয়।
অথচ পানীয় এবং খাদ্যের সঙ্গে অতিরিক্ত লবণ
শরীরের ভেতরে
প্রবেশ করে। রক্ত প্রয়োজনীয় লবণের মাত্রার অতিরিক্ত লবণ বর্জন করে। কাজেই এই অতিরিক্ত লবণ
শরীর থেকে নিষ্কাশন করতে হয়।
প্রাণীদেহ বিভিন্ন উপায়ে এই অতিরিক্ত লবণ নিষ্কাশন করে থাকে। যেমন,
মানবদেহ ঘর্মগ্রন্থির মাধ্যমে ঘামের সঙ্গে এবং
মূত্রত্যাগের সময় অন্যান্য ক্ষতিকর পদার্থের সঙ্গে শরীরস্থ
অতিরিক্ত লবণ বের হয়ে যায়। প্রতিটি প্রাণীর ক্ষেত্রে এই নিষ্কাশন ব্যবস্থা
একই রকম নয়।
কুমির এবং
আরও একটি প্রজাতির সরীসৃপের ক্ষেত্রে এই অতিরিক্ত লবণ নিষ্কাশনী নালীর মুখটি
থাকে চোখের কোণে। কাজেই
যখন তারা লবণ মিশ্রিত তরল পদার্থ ত্যাগ করে, তখন তা চোখের ভেতর দিয়ে টপটপ
করে ঝরে পড়ে। দেখে মনে হবে যেন প্রাণীটি
কাঁদছে। কুমির ছাড়াও কিছু প্রজাতির সামুদ্রিক কাছিম, সাপ এবং
গুইসাপের লবণ নিষ্কাশন নালী থাকে চোখের কোণে।
সবুজ সামুদ্রিক কাছিম সমুদ্রের পানিতেই বাস করে।
বছরের একটা সময়ে প্রজনন ঋতুতে স্ত্রী কাছিম
রাতের অন্ধকারে সমুদ্রের বালুতটে এসে ডিম পেড়ে লুকিয়ে
রেখে যায়। সমুদ্রে ফিরে যাওয়ার সময় দেখা যাবে,
সেই কাছিমের চোখ বেয়ে টপ টপ করে পানি ঝরে পড়ছে।
নিজের অনাগত সন্তানদের ভবিষ্যতে মাতৃস্নেহ
বঞ্চিত নিঃসঙ্গতা উপলব্ধি করে মা কাছিম কাঁদছে এরকম মনে
হতেই পারে। আসলে কিন্তু তা নয় এটিও ওই একই
ব্যাপার। কিছু সামুদ্রিক পাখি, যেমন-আলব্রেট্রস।
এরা
সামুদ্রিক লবণাক্ত পানি স্বেচ্ছায় পান করে।
স্বভাবতঃই এদের অতিরিক্ত লবণ অধিক হারে নিষ্কাশন করতে হয়।
এদের লবণ নিষ্কাশনী নারী নাসিকার গর্তে এসে
মিশেছে। এ কারণে এদের নাসিকা থেকে সারাক্ষণ ফোঁটা ফোঁটা
স্বচ্ছ তরল পদার্থ ঝরে পড়তে দেখা যায়। এই
লবণাক্ত রসের ঘনত্ব সমুদ্রের পানি এবং রক্তের চেয়ে অধিক। এই
ঘনত্বের কারণে অনেক সময় নাসিকার ছিদ্রে এই
স্বচ্ছ রস লেগে থাকে, দেখে মনে হবে এদের খুব
সর্দি লেগেছে
। কাজেই কিছু সরীসৃপ যেমন কাঁদে, কিছু সামুদ্রিক পাখি তেমনি
আজীবন সর্দি রোগে ভোগে। কিন্তু
আসলে
এগুলো প্রকৃতি প্রদত্ত শরীরস্থ অতিরিক্ত লবণ
নিষ্কাশনের একটি শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়াকলাপ মাত্র।
ফেসবুকে আমাদের সাথেই থাকুন । লাইক Info world
সূত্র- বাংলাদেশপ্রতিদিন।
No comments:
Post a Comment