NEWS

বাংলায় তুলি প্রযুক্তির সুর

5 Feb 2015

২০০ বছরের জীবিত মমি


পদ্মাসনে বসা এক ভিক্ষু। বাঁ হাতের মুঠি খোলা। ডান হাতে মন্ত্রের সূত্রের ভঙ্গি। মমি করা দেহটিতে পচনের কোনো লক্ষণ নেই। ধারণা করা হচ্ছে মমিটি প্রায় ২০০ বছর আগের। বৌদ্ধ পণ্ডিতেরা বলছেন, এই আসনে থাকার অর্থ ভিক্ষু এখনো ‘গভীর ধ্যানে’ মগ্ন। ফরেনসিক বিজ্ঞানীরা মমিটি পরীক্ষা করে দেখছেন। মঙ্গোলিয়ার রাজধানী উলান বাটোরে গত সপ্তাহে পাওয়া এই ভিক্ষুর মমি নিয়ে তোলপাড় চলছে দেশ-বিদেশে। খবর দ্য টেলিগ্রাফের।


উলান বাটোরের সঙ্গিনো খাইরখান এলাকার একটি বাড়ি থেকে গত সপ্তাহে পশুর চামড়ায় মোড়া অবস্থায় এই ভিক্ষুর মমিটি উদ্ধার করা হয়। স্থানীয় গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী একটা গুহা থেকে মমিটি চুরি করে বিক্রির উদ্দেশ্যে ওই বাড়িতে রাখা হয়েছিল। এ ঘটনায় ৪৫ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে বলেও জানানো হয়েছে গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে।


মমিটি প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো বলে ধারণা করা হলেও ওই ভিক্ষুর পরিচয় সম্পর্কে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। মঙ্গোলিয়ার পত্রপত্রিকার খবর অনুযায়ী মমিটি উলান বাটোরের জাতীয় ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

উলান বাটোর বৌদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের মঙ্গোলিয়ান ইনস্টিটিউট অব বুড্ডিস্ট আর্টের প্রতিষ্ঠাতা গানখুইগিন পুইরেভাত সাইবেরিয়ান টাইমসকে বলেন, ‘এই লামা পদ্মাসনের বজ্র ভঙ্গিতে বসে আছেন। বাঁ হাতের মুঠি খোলা এবং ডান হাতে মন্ত্রের সূত্রের ভঙ্গি।’ এই বৌদ্ধ পণ্ডিতের মতে, ‘এই ইঙ্গিতের অর্থ হলো তিনি এখনো মারা যাননি। বৌদ্ধ লামাদের প্রাচীন চর্চা অনুসারে এর অর্থ হলো তিনি এখনো গভীর ধ্যানে মগ্ন আছেন।’


বৌদ্ধ পণ্ডিতদের কেউ কেউ বলছেন ওই ভিক্ষু হয়তো ‘তুকদাম’ বা এমনই এক ধ্যানমগ্ন অবস্থায় আছেন, যা কিনা ‘জীবিত বা মৃত’ অবস্থার চেয়ে ভিন্ন এক অবস্থা। তিব্বতের আধ্যাত্মিক নেতা দালাই লামার একজন চিকিত্সক ও ভিক্ষু ব্যারি কারজিন সাইবেরিয়ান টাইমসকে বলেন, ‘কেউ যদি ওই অবস্থায় তিন সপ্তাহ পার করতে পারেন, তাহলে তাঁর দেহ ক্রমশ শীর্ণ হতে হতে একসময় তাঁর চুল, নখ আর পরিধেয় ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না।’


প্রায় একই রকম এক ঘটনা ঘটেছিল রাশিয়ার বুর্যতিয়া অঞ্চলে। ২০০২ সালে বৌদ্ধ লামা দাশি-দরঝো ইতিগিলোভের দেহ সমাধি থেকে তোলার পর তাতে পচনের কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি। উলান উদে বিহারের ভিক্ষুরা জানিয়েছিলেন, উত্সবের সময়গুলোতে ইতিগিলোভের দেহের তাপমাত্রা বেড়ে যেত বলে টের পেতেন তাঁরা। ইতিগিলোভ ধ্যানরত অবস্থায় ১৯২৭ সালে দেহত্যাগ করেন। তাঁকে পদ্মাসনে সমাধিস্থ করার জন্য শিষ্যদের বলে গিয়েছিলেন তিনি। ইতিগিলোভের দেহ লবণে ঢেকে সমাহিত করা হয়েছিল।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad