NEWS

বাংলায় তুলি প্রযুক্তির সুর

21 Dec 2014

‘নর্থ সিমেট্রি’- যে কবরস্থানে রয়েছে ১০হাজার জীবিত মানুষ!

ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলায় এক সমাধিক্ষেত্রে গেলে আপনার চোখ কপালে ওঠার যোগাড় হবে। কেন? না, সেখানে কোন ভূত-প্রেতের উপস্থিতি নেই। বরং সে জায়গাটি দেখে মনে হবে আপনি কোন একটি ছোট শহরে এসে উপস্থিত হয়েছেন। জায়গাটি কোলাহলে পরিপূর্ণ। সমাধিক্ষেত্রের শিহরণ জাগানো নীরবতা এখানে একদমই নেই। এই সমাধিক্ষেত্রেই রয়েছে দোকান, যেখানে বিক্রি হয় সার্ডিন নামের সামুদ্রিক মাছ, নুডলস, চকোলেট, মোমবাতি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস। এমনকি এই সমাধিক্ষেত্রে প্রিপেইড মোবাইল কার্ডও বিক্রি হয়।

এই সমাধিক্ষেত্রের কবরগুলোর মাঝেই আছে অস্থায়ী রেস্তোরাঁ, যাতে বিক্রি হয় খাদ্য ও পানীয়। দেয়ালগুলোতে ঝোলানো হয়েছে উঠানামা করার জন্য মই। ভেবে অবাক হচ্ছেন, মৃতদের জন্য এতো আয়োজন কেন? আসলে এত সব আয়োজন মৃতদের জন্য নয় বরং জীবিত মানুষের জন্য! ম্যানিলার হাজার হাজার মানুষ এই সমাধিক্ষেত্রকে বেছে নিয়ে বসবাস করার জন্য। ফিলিপাইনের রাজধানীতে অবস্থিত এই ‘নর্থ সিমেট্রি’ এখন মোটামুটি ছোট একটি গ্রামের মতো, যাতে অধিবাসীর সংখ্যা দশ হাজার!

এই সমাধিক্ষেত্রে বসবাসকারী অধিবাসীদের অনেকেরই দাদা-পরদাদা এখানেই বাস করে এখানেই মারা গিয়েছেন। বেশ কয়েক প্রজন্ম ধরে তারা এখানেই বাস করছে। তবে এই সমাধিক্ষেত্রের বেশিরভাগ মানুষ এসেছে ফিলিপাইনের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে রাজধানী ম্যানিলায় এসেছিল ভাগ্যের অন্বেষণে। ব্যর্থ হয়ে আশ্রয় নিতে শুরু করে এই সমাধিক্ষেত্রে। পানীয় ও খাবার দোকান চালানো ছাড়াও এখানকার অধিবাসীরা কবরকেই বেছে নিয়েছে তাদর উপার্জনের উপায় হিসেবে। শেষকৃত্যানুষ্ঠানে এখানকার কিশোররা ৫০ পেসো (৫০ সেন্ট) বিনিময়ে কফিন বহন করে। প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষরা তাদেরকে ভাড়া করা হয় কবরের রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের কাজে। আর নারীরা ধুয়ে-মুছে সমাধিগুলোকে রাখেন ঝকঝকে-তকতকে। আর শিশুরা প্লাস্টিক, ফেলে দেয়া জিনিস সংগ্রহ করে যেগুলো পরে বিক্রি করে দেয়া হয়।

আরো মজার বিষয় হলো, এখানে যারা আছে তারা কিন্তু বেশ আনন্দেই আছে। তাদের জীবনধারা হয়তো খুব আকর্ষণীয় নয়, কিন্তু মৃতদের মাঝেই বেঁচে থাকার এই সংগ্রামের জন্য তারা প্রশংসা পেতেই পারে। শুধু তাই নয়, বেশ কিছু খালি সমাধি এখন টিভি ও কারাওকে সেট তৈরির জন্য ভাড়া দেয়া হয়। যে কেউ ৫ পেসোর বিনিময়ে সেখানে গান গাইতে পারে। এছাড়া এই সমাধিক্ষেত্রে আছে দর্জি, বিউটিশিয়ান ও স্কুলশিক্ষক। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বাসস্থান সুবিধাসহ তাদেরকে অন্যত্র সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেও সফল হয় নি। কবরস্থানের জীবিত অধিবাসীরা তাদের এই অদ্ভুত গ্রাম ছেড়ে কোথাও যেতে রাজি নয়। এছাড়া তাদের জীবিকাও যে সমাধিক্ষেত্রকে ঘিরেই যেটা তারা আর ছাড়তে সক্ষম নয়। আর কথায় আছে ‘home, sweet home!” হোক না তা কবরস্থানের ভেতরে!

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad