NEWS

বাংলায় তুলি প্রযুক্তির সুর

19 Dec 2014

ক্যান্সার কি এবং এর প্রতিকার বা প্রতিরোধের উপায়

ক্যান্সার প্রতিরোধের উপায়... জেনে রাখুন কাজে লাগবেক্যান্সার মানুষের মৃত্যুর একটি অন্যতম প্রধান কারণ৷ ক্যান্সার এর কারণ ঠিকভাবে বলা কঠিন৷ তবে নিম্নলিখিত অভ্যাসগুলোকে দায়ী করা হয়ে থাকে৷

ক্যান্সার কি ? ঃ বিশ্বের সমস্ত প্রাণীর শরীর অসংখ্য ছোট ছোট কোষের মাধ্যমে তৈরি। এই কোষগুলো একটা নির্দিষ্ট সময় পরপর মারা যায়। এই পুরনো কোষগুলোর জায়গায় নতুন কোষ এসে জায়গা করে নেয়। সাধারনভাবে কোষগুলো নিয়ন্ত্রিতভাবে এবং নিয়মমতো বিভাজিত হয়ে নতুন কোষের জন্ম দেয়। সাধারনভাবে বলতে গেলে যখন এই কোষগুলো কোনও কারণে অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়তে থাকে তখনই ত্বকের নিচে মাংসের দলা অথবা চাকা দেখা যায়। একেই টিউমার বলে। এই টিউমার বিনাইন বা ম্যালিগন্যান্ট হতে পারে। ম্যালিগন্যান্ট টিউমারকেই ক্যান্সার বলে। বিস্তারিতভাবে বলতে গেলে, অনিয়ন্ত্রিতভাবে বিভাজনক্ষম হয়ে বৃদ্ধি পাওয়া কলাকে নিয়োপ্লাসিয়া (টিউমার) বলে, এবং সেরকম ক্রিয়া যুক্ত কোষকে নিয়োপ্লাস্টিক কোষ বলে। নিওপ্লাস্টিক কোষ আশেপাশের কলাকে ভেদ করতে না পারলে তাকে বলে নিরীহ বা বিনাইন টিউমার। বিনাইন টিউমর ক্যান্সার নয়। নিওপ্লাসিয়া কলা ভেদক ক্ষমতা সম্পন্ন হলে তাকে ম্যালিগন্যান্ট টিউমার বা ক্যান্সার, এবং তার অনিয়ন্ত্রিত বিভাজনক্ষম ভেদক ক্ষমতাইযুক্ত কোষগুলিকে ক্যান্সার কোষ বলে। অনেক ক্যান্সার প্রথমে বিনাইন টিউমার হিসাবে শুরু হয়, পরে তার মধ্যেকার কিছু কোষ পরিবর্তিত (ট্রান্সফর্মেসন) হয়ে ম্যালিগন্যান্ট (অর্থাৎ ভেদক ক্ষমতাযুক্ত) হয়ে যায়। তবে বিনাইন টিউমার ক্যান্সারে পরিবর্তিত হবেই তার কোন স্থিরতা নেই। কিছু বিনাইন টিউমার সদৃশ ব্যাধি আছে যাতে ক্যান্সার হওয়া অবস্যম্ভাবী - এদের প্রি-ক্যান্সার বলে। নামে বিনাইন অর্থাৎ নিরীহ হলেও বিনাইন টিউমারও চাপ দিয়ে আশেপাশের কলার ক্ষতি করতে পারে। মেটাস্টাসিস হলো ক্যান্সারের একটি পর্যায়, যাতে ক্যান্সার কোষগুলি অন্যান্য কলাকে ভেদ করে ও রক্ত, লসিকাতন্ত্র(Lymphatic System) ইত্যাদির মাধ্যমে দূরবর্তী কলায় ছড়িয়ে যায়।


সাধারন লক্ষন ঃ


  1. ধূমপান : ধূমপায়ীদের মধ্যে ফুসফুস, স্বরযন্ত্র, খাদ্যনালী, পাকস্থলী, মূত্রথলি, অগ্ন্যাশয় ইত্যাদি অঙ্গের ক্যান্সারের হার বেশি৷ মাথা ও ঘাড়ের চামড়ার ক্যান্সারও ধূমপায়ীদের বেশি হয়৷ তামাক পাতা ও তা থেকে প্রস্তুত সামগ্রী খেলেও ফুসফুস ও মুখগহব্বরের ক্যান্সার বেশি হয়ে থাকে৷ অতএব ধূমপান অবশ্য বর্জনীয়৷
  2. খাবার : গবেষণায় দেখা গেছে যে, প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ক্যান্সার খাবারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট৷ অধিক পরিমাণে প্রাণীজ চর্বি (মাছ ব্যতিক্রম) খেলে স্তন, বৃহদান্ত্র, প্রস্টেট, জরায়ু, ফুসফুস ইত্যাদি অঙ্গের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়৷ সুতরাং প্রাণীজ চর্বি খাওয়া কমিয়ে উদ্ভিদজাত চর্বি তথা ভেজেটেবল অয়েল (সয়াবিন, সানফ্লাওয়ারতেল ইত্যাদি (তবে পামওয়েল খাওয়া উচিত নয় কারণ উদ্ভিদ তেল হওয়া সত্ত্বেও এতে প্রচুর সেচুরেটেড ফ্যাটি এসিড থাকে) খাওয়া যেতে পারে৷

    শাকসবজি-ফলমূল পর্যাপ্ত পরিমাণে খাওয়া উচিত৷ কারণ এ জাতীয় খাবারে অঁাশ থাকে৷ যারা পর্যাপ্ত অঁাশ জাতীয় খাবার খান তাদের বৃহদান্ত্র-পায়ুপথ, স্তন, প্রস্টেট ইত্যাদি অঙ্গের ক্যান্সার কম হতে দেখা যায়৷ তাছাড়া শাকসবজি-ফলমূল-এর প্রচুর পরিমাণে ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্যকারী ভিটামিন যেমন ভিটামিন সি (টক ফলমূল), ভিটামিন-ই (সয়াবিনসহ সকল সবজি তেল) ও বিটা-ক্যারোটিন (হলুদ রংয়ের ফলমূল ও সবুজ শাক) থাকে৷
  3. রোদ : যারা দীর্ঘ সময় রোদে থাকেন তাদের চামড়ার ক্যান্সার বেশি হতে দেখা যায়৷ মনে রাখবেন যে যত বেশি ফর্সা রোদের কারণে চামড়ার ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা তার তত বেশি৷ সম্ভব হলে দীর্ঘক্ষণ রোদে অবস্থান পরিহার করা উচিত৷ রোদে যাওয়ার আগে ভিটামিন-ই সমৃদ্ধ ক্রিম গায়ে মাখতে পারেন, কারণ ভিটামিন-ই চামড়াকে রোদের ক্ষতিকারক দিক থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা করে৷
  4. মেদবাহুল্য : পরিসংখানে দেখা গেছে যে, মেদবহুল লোকদের ক্যান্সার ও ক্যান্সার থেকে মৃতু্যর হার একই অবস্থানের মেদহীনদের তুলনায় বেশি৷ অতএব অতিরিক্ত ওজন কমান৷
  5. মদ : দেখা গেছে যে, মদ্যপায়ীদের মধ্যে গলবিল, ঠেঁাট, স্বরযন্ত্র, খাদ্যনালী ও লিভারের ক্যান্সারের হার বেশি৷ আর যারা একই সঙ্গে ধূমপান ও মদ্যপান-এই দুইয়েই অভ্যস্থ তাদের মধ্যে এই অঙ্গগুলোর ক্যান্সারের হার আরও বেশি৷ অতএব ধূমপান, মদ্যপান পরিহার করুন৷
  6. স্তনদুধ পান : যে সব নারীদের সন্তান হয়নি অথবা হলেও বাচ্চাদের স্তনদুধ পান করতে দেননি তাদের স্তনে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি৷ অতএব সন্তানকে তার পূর্ণমেয়াদ দুধ খেতে দিন৷
  7. বহুগামিতা : বহুগামী মেয়েদের জরায়ু (Cervix)-র ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি৷
  8. রঙিন খাবার : বিভিন্ন খাবার-এর স্বাদ, আকর্ষণীয়তা বা স্থায়িত্বের জন্য কৃত্রিম রঙ ব্যবহার করা হয়ে থাকে৷ দীর্ঘদিন যাবত্‌ বিভিন্ন কৃত্রিম রঙগুলো-কে ক্যান্সার সৃষ্টির অনুকূল বলে মনে করা হচ্ছে৷ অতএব এ জাতীয় খাবার বর্জন করুন৷
  9. রাসায়নিক পদার্থ : ক্যান্সার সৃষ্টিকারী বলে খ্যাত বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ (যেমন -এস্বেস্স, কোল টার, আর্সেনিক, বেনজিন-ডেরাইভেটিভ ইত্যাদি) প্রস্তত, প্রক্রিয়াজাত ও ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত লোকদের বিশেষ করে শ্রমিকদের এ সংশ্লিষ্ট ক্যান্সার বেশি হয়ে থাকে৷ এ ব্যাপারে কমী ও নিয়োগকারীদের সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে৷

মনে রাখতে হবে যে, ক্যান্সারের চিকিৎসা সুযোগ সীমিত৷ সুতরাং-এর প্রতিরোধের উপায়গুলো কাজে লাগাতে হবে৷


No comments:

Post a Comment

Post Top Ad