সকাল ৮টা থেকে কাস শুরু। স্কুল চলে বেলা ১২টা পর্যন্ত। এরপর শুরু হয় কোচিং ক্লাস; আবার কারো চলে বিশেষ ক্লাস। কেউবা পড়তে যায় নির্দিষ্ট স্যারের কাছে। এরপর বাসায় ফেরা হয় সন্ধ্যায়। এমনটাই রুটিন উত্তরা হাই স্কুলের মেয়ে শিক্ষার্থীদের। অপরদিকে ছেলেদের রুটিন ১২টা থেকে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা যেন ৯-১০টা থেকেই শুরু হয়ে যায়।
তাদের দৈনন্দিন রুটিনও চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। আপাত দৃষ্টিতে পড়ালেখার জন্য সন্তানদের এমন ব্যস্ত শিডিউল দেখে যে কোন অভিভাবকই নিশ্চিন্ত থাকেন। কিন্তু কার্যত সরেজমিনে দেখা গেছে তার ভিন্ন রূপ।
স্কুল সময়ে ইউনিফরম পরা অবস্থায়ই উত্তরা হাই স্কুলের শিক্ষার্থীদের দেখা গেছে পার্কে, গেম জোনে, সাইবার ক্যাফে, বিভিন্ন ফাস্টফুড, নির্জন স্থান, লেকের পাড়সহ বিভিন্ন মার্কেট স্থানে। তবে স্বাভাবিক অবস্থায় দেখা যায়নি এদের প্রায় কাউকেই।
৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণী র্পর্যন্ত সব ক্লাসের ছেলে-মেয়েদের মাঝে এ প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ক্লাস, কোচিং, বিশেষ কাস কিংবা স্যারের কাছে পড়ার কথা বলে তারা ব্যাস্ত প্রেমের কাসে। ছেলে-মেয়েদের জুটিবদ্ধভাবে ঘনিষ্টভাবে আপত্তিজনক অবস্থায় দেখা যায় এসব স্থানে। পড়ালেখার চেয়ে তাদের কাছে গুরুত্বপুর্ণ প্রেমের পাঠ।
সম্প্রতি বেলা ১১টার সময় ৭নং সেক্টরের ২১ নং রোডের বটতলায় দেখা গেল ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী টিউলিপকে (ছদ্মনাম) একই কাসের সহপাঠী আদিল’র (ছদ্মনাম) হাত ধরে কাঁদছে। অনুনয় বিনয় করছে কোন একটি বিষয় নিয়ে। কাছে গিয়ে জানা গেল তারা প্রেম করতো; কিন্তু আদিল এখন অন্য একটি মেয়ের সঙ্গে প্রেম করে।
এরই বিপরীত চিত্র দেখা গেল নদ্দারটেক জামে মসজিদের পাশে। ৯ম শ্রেণীর ছাত্র সজিব (ছদ্মনাম) ৭ম শ্রেণীর মুন্নীর (ছদ্মনাম) পথ আটকে বোঝানোর চেষ্টা করছে। জানা গেল মুন্নী এখন অন্য ছেলের সঙ্গে প্রেমে মত্ত; ইদানিং আর পাত্তা দেয় না সজিবকে। তাই সজিবের কাস ফাঁকি দিয়ে মুন্নীকে বোঝানোর আকুল চেষ্টা চলছে এখন। এভাবেই প্রেম আর বিরহের ফাঁদে পড়ে মুল্যবান শিক্ষা জীবনকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে শিক্ষার্থীরা।
বছরখানেক আগে ৩নং সেক্টরে এক স্কুল ছাত্রী প্রেমে প্রত্যাখান হয়ে বাসার জানালা থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করে।
এ রকম বেশ কিছু আত্মহত্যার ঘটনা ইতিমধ্যে ঘটেছে। এছাড়া ১১নং সেক্টরের একই উত্তরা হাই স্কুলের এক ছাত্রীর ১৩’র অধিক প্রেমিকা নিয়ে সাপ্তাহিক মুক্তমনে আলোচিত দুটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। এসব ঘটনা এবং সমসাময়িক পরিবেশ সেসব ঘটনারই প্রাথমিক প্রতিচ্ছবি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্র জানায়, অধিকাংশ মেয়েদেরই একাধিক বয় ফ্রেন্ড (প্রেমিক) আছে। তারা নিজেদের দৈনন্দিন খরচ যোগাড় করে প্রেমিক ছেলেদের পকেট থেকে। আর ছেলেরা তাদের গার্ল ফ্রেন্ডদের (প্রেমিকা) মোবাইলে ফেক্সি-লোড, বিভিন্ন উপলক্ষ্যে গিফট প্রদানসহ রসনাবিলাসের তৃপ্তি মেটাতে যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হয় তা তারা পরিবার থেকে পায়না।
ফলে অর্থের যোগান দিতে তারা চুরি, ছিনতাইসহ নানা অবৈধ কার্যকলাপে লিপ্ত হয়ে পরছে।
শুধু তাই নয়, এসব জুটির অবাধ ও বেপরোয়া মেলামেশা নিয়ে বিস্তর অভিযোগ আশপাশের বাসিন্দাদের। নদ্দারটেক জামে মসজিদের নামাজ পড়তে আসা আনোয়ার হোসেন অভিযোগ করে বলেন, নামাজের সময় ও এর আগে-পরে প্রায়ই স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের জুটিবদ্ধভাবে বেপরোয়া মেলামেশা করতে দেখা যায়।
এদের অবাধ মেলামেশা রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করতে অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। বার বার বলার পরও এদের ফেরানো যাচ্ছে না।
এসব শিক্ষার্থীদের অধিকাংশ বাবা-মা চাকুরি এবং পার্টি নিয়ে ব্যস্ত থাকায় ছেলে-মেয়েদের প্রতিদিনের কর্মকাণ্ডের ওপর নজর দিতে পারেন না।
এভাবে একদিকে অভিভাবকদের অবহেলা ও অসচেতনতা অপরদিকে স্কুল কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতা এবং এসব বিষয়ে আইনী কোন ব্যবস্থাপনা না থাকার কারণে অ-প্রাপ্ত বয়স্ক শিক্ষার্থীদের এসব অবাধ ও আপত্তিজনক মেলামেশা দিনদিন বেড়েই চলছে।
শিক্ষাবিদরা মনে করছেন মাধ্যমিক পর্যায় থেকে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়ার পেছনে এ সমস্ত ঘটনাগুলি অন্যতম কারণ। এখনই এ বিষয়ের প্রতিকারে কার্যকরি পদপেক্ষ গ্রহণ না করলে ভবিষ্যতে সমাজে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করবে।
No comments:
Post a Comment