আমার এক বন্ধু রনি হঠাৎ
করে আমাদের অফার দিল ওর মামার বাড়িতে যেতে। শুনে আমরা পাঁচ বন্ধু হই
হই করে উঠলাম। পরীক্ষা শেষ,
কোন কাজ নেই। শুধু বসে বসে আড্ডা
দিতে আর
ভাল লাগছিল না। তাই প্লান
করার কিছুদিনের মাঝেই বেড়িয়ে পরলাম। আমরা
পাঁচজন
ছিলাম রনি, সূমিত, আনিস, রাজীব
আর আমি। গ্রামে গিয়ে চমক
লাগলো আমাদের। গ্রামাটি আসলেই বেশ
সুন্দর ছিল আর গ্রামের মানুষ গুলোও
ছিল
বেশ সহজ সরল। কিন্তু গ্রামটাতে এই বিজ্ঞানের
যুগেউ ছিল কেমন যেন এক অদ্ভুত
গোঁড়ামী আর অজ্ঞতা। থাক
আর
গ্রামের কথার দিকে না গিয়ে আসল কথায়
আসি।
এবার মূল গল্পটি শুরু
করি। একদিন আমরা সবাই
মিলে একটা ফাঁকা ধান
ক্ষেতের পাশে বসে গল্প
করছিলাম।গল্প
করতে করতে কখন যে সন্ধ্যা হয়ে গেল কেউই
টের
পাইনি। গল্প করতে করতে
হঠাৎ
আমাদের চোখে পড়লো একটি
বড়ই
(কূল) গাছ আর তার পাশেই
একটা পুকুর। পুকুর পাড়ে
কি যেন
একটা উঁচু ঢিবির মত কিছু
একটা।
হালকা কুয়াশা থাকায়
ভালোভাবে কিছু বোঝা
যাচ্ছিল
না। সূমিত আবার কবর খুব
ভয়
পেত। তাই আমরা সেটা নিয়ে
বেশ
কিছুক্ষন মজা করলাম।
এমনিতেও
সন্ধ্যা হয়ে আসছিল তাই
আমরা কথা বেশি না
বাড়িয়ে
সেখান থেকে চলে এলাম
বাড়িতে। সারাদিন
ঘুরেফিরে খুব
ক্লান্ত ছিলাম সবাই। তাই
রাত্রে খেয়ে শুয়ে পরলাম
তাড়াতাড়িই। পরদিন খুব
সকালে ঘুম ভেঙ্গে দেখি
সবাই
ঘুমে কিন্তু রাজীব
বিছানায়
নেই। ভাবলাম হয়ত আরো
আগেই
উঠে গেছে। বিছনায় গড়াগড়ি করতে করতে হঠাৎ
শুনি বাইরে কিসের যেন খুব চেঁচামেচি হচ্ছে।
তাড়াতাড়ি বাইরে গিয়ে
দেখি
রাজীব শুয়ে আছে জ্ঞানহীন
ভাবে। আমি জিজ্ঞেস করলাম –
রাজীবের কি হয়েছে! আমার
বন্ধুর মামা বললেন তিনি
যখন
ভোরে নামাজ পড়ে মসজিদ
থেকে বাড়ি ফিরছিলেন তখন
দেখেন রাজীব পুকুরপাড়ের
বড়ই
গাছের নিচে বসে খুব
কাঁদছে।
মামা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস
করলেন
যে কি হয়েছে, কিন্তু রাজীব কোন
কথাই না বলে শুধু কাঁদতেই
থাকলো। মামা কিছু না বুঝতে পেরে রাজীবকে
সাথে
করে বাড়ি নিয়ে এলেন।
বাড়ি পৌছেই রাজীব জ্ঞান
হারিয়ে ফেলল। মামা
ভাবছিলেন
শহুরে ছেলে পেলে তো,
রাতে হয়ত
কারো সাথে মনমালিন্য
হয়েছে তাই বাইরে গিয়ে কাঁদছিলো।
আমি শুনে অবাক হলাম- কই
রাতে তো রাজীব সবার
সাথে বেশ হাসি ঠাট্টা
করলো,
আমার সাথে মারামারিও
করলো শোবার জায়গা নিয়ে,
কিন্ত
তখন তো এমন কোন কিছু কেউ
করেনি যে এভাবে মাঝরাতে
বাইরে গিয়ে কাঁদতে হবে!
ব্যাপার শুনে আমার অন্য
বন্ধুরাও
অবাক হল। যা হোক আমরা
সবাই
বসে রাজীবের জ্ঞান ফেরার
অপেক্ষা করতে লাগলাম।
আরো প্রায় ঘন্টা খানেক
পর
রাজীবের জ্ঞান ফিরল।
আমাদের
দিকে রাজীব কেমন যেন
বোকাবোকা দৃষ্টিতে
তাকিয়ে
থাকল।
আমরা পাত্তা না দিয়ে
জিজ্ঞেস
কলাম – তুই ওই ভোরে একা একা পুকুর
পাড়ে কি করছিলি? আমাদের
চাপাচাপিতে সে শেষ
পর্যন্ত
বলল আমরা যখন গল্প
করছিলাম
আগের দিন সন্ধায় সে নাকি কি সব শব্দ
শুনতে পেয়েছিল। আমরা
বললাম –
আমরা তো শুনতে পাইনি। সে
বলল
– তোরা খেয়াল করিসনি। আমরা আর কথা বাড়ালাম না।
কিছুক্ষন পর সবাই খেয়ে দেয়ে বসে ছিলাম
তখন
খবর এলো মামা আমাদের
ডাকছেন। সবাই মিলে মামার
ঘরে গেলাম। মামা আমাদের
দেখে বলতে লাগলেন –
তোমরা আর কোনোদিন ওই
পুকুর
পাড়ে যাবেনা, বিশেষত
সন্ধ্যায়। আমরা বললাম-
কেন
মামা? মামা বললেন – অনেক
অনেক দিন আগে এই গ্রামেরই
এক
মেয়ে ভর সন্ধ্যায় ওই
গাছে ফাঁসি নিয়ে
আত্নহত্যা করে।
কারণটা জানা যায়নি। তার
লাশটাকেও কেউ দাফন
করতে রাজী হয়নি। শেষ
পর্যন্ত
তার পরিবার লোকেরা জানাজা ছাড়াই
লাশটাকে ওই বরই গাছের
নিচে কবর দেয়। এ ঘটনার
পরে ওই মেয়ের পরিবারে লোকজনদের
একঘরে করা হয়। তার পর
থেকেই
সে গাছের আশে পাশে
প্রায়ই
অদ্ভূত কিছু দেখা যায়।
কে যেন
ওখানে বসে কাঁদে, কাউকে দেখতে পেলে কাছে ডাকে।
রাজীব বলে – এটা তো কোন
কথা হয়ে পারে না,
ভূত বলে কিছু
নেই। মামা তর্ক না করে
বলে –
তাহলে বলতো, তুমি আজ
ভোরে ওখানে কেন গিয়েছিলে
আর
কেনইবা কাঁদছিলে? রাজীব আর
কিছু বলে না। মামার ঘর
থেকে বেড়িয়ে আমরা আবার
ধরলাম রাজীবকে – সত্যি করে বলতো তুই
আসলে কি করতে গিয়াছিলি
ওখানে
? রাজিব বলে –
সে ভোরে যায়নি আসলে,
সে গিয়েছিলো মাঝরাতে।
আমরা সবাই তখন
ঘুমিয়ে পরেছিলাম। তার
ঘুম
আসছিলো না। সে সুধু
সন্ধ্যায়
শোনা শব্দটার কথা
ভাবছিলো।
সেদিন সন্ধ্যায়ই
সে বুঝতে পেরেছিলো যে ওই
শব্দটা আমরা কেউ শুনতে
পাইনি।
আসলে সে শব্দটা শুনেই
আমরা ওই
পুকুর পাড়ের দিকে তাকাই,
কিন্তু
মজা করার নেশায়
থেকে সেটা আর আমাদের
মনে ছিলো না। কিন্ত
রাজীবের
কেন যেন সন্দেহ হয়। তাই
সে ওখানে যেতে চেয়েছিলো।
কিন্তু আমাদের বাধায় ও
আর
যেতে পারেনি।
মাঝরাতে আমরা যখন সবাই
ঘুমিয়ে তখন সে বাড়ির
বাইরে বেরিয়ে আসে। তারপর
এগিয়ে যায় ওই গাছতলায়।
শীতের রাত ছিলো। আকাশে
চাঁদ ও
ছিলো। বেশ কুয়াশা থাকায়
সামনের কিছুদুর আর
পরিষ্কার
দেখা যাচ্ছিলো না। তখন
রাজীবের মনে হয়
টর্চটা না এনে ভুল করেছে।
তারপর সে সামনের
দিকে এগিয়ে যায়। গাছটা খুজে পেতে বেশ কষ্ট
হচ্ছিলো। বারবার মনে হচ্ছিলো পথ
ভুলে করছে না তো? ভিষণ অবাক
হয় রাজীব তখন। বাড়ি
থেকেও
তো ওই পুকুর পাড় দেখা
যায়।
কিন্তু তার সেখানে এতোটা
সময়
লাগছে কেন। অনেক্ষন পড়ে রাজীব শেষ পর্যন্ত
পৌছায়।
কিন্ত সেখানে তেমন আহামরি কিছু সে দেখতে
পায়নি।
গাছের নিচে বসেবসে কি করবে তাই
ভাবছিলো। তখন তার ভিষণ
ঘুম
পেয়ে যায় আর সে অখানে
বসেই
ঘুমিয়ে পরে। ঘুম ভেঙ্গে দেখে সে বাড়িতে
বিছানায় শুয়ে আছে আর
সবাই
তাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে।
শুনে আমরা আরো অবাক হলাম।
বললাম – তুই যদি ওখানে ঘুমিয়েই
থাকবি তাহলে ভোরবেলায়
মামা যখন তোকে নিয়ে এল
তখন
তুই কাঁদছিলি কেন?
শুনে রাজীবও
ভিষণ অবাক হল। সে বলল –
আমিও
বুঝিনাই যখন মামা আমাকে বললেন
আমি নাকি কাঁদছিলাম।
কিন্তু……. ।
সেদিন সারাদিন আবার আগের
মতই রাজীব আমাদের
সাথে ঠাট্টা মশকরা করতে
লাগলো। কিন্তু
আমরা বুঝতে পেড়েছিলাম
রাজীব
কিছু কারার চেষ্টা করবে।
আমরা তার উপর করা নজর
রাখতে লাগলাম। কিন্তু সে
আর
কিছুই করল না।
কয়েক দিন কেটে গেলো
এভাবে।
রাজীব ও বেশ স্বাভাবিক
আচরণ
করতে লাগল। বেশ কিছুদিন
পরে আমরা সবাই প্রায়
ভুলেই
গেলাম রাজীবের ওই ঘটনাটা।
তখনই ঘটলো আসল ঘটনাটা।
রোজকার মত সেদিন রাতেও
খেয়েদেয়ে আমরা সবাই
আগুন
জ্বালিয়ে গোল হয়ে বসে
গল্প
করলাম। তারপর সবাই
মিলে খুনশুটি করতে করতে
বিছানায় শুলাম, গল্প
করতে করতে ঘুমিয়েও
গেলাম।
গভীর রাতে হঠাৎ ভিষণ
রকমের
গোলমাল আর ভিষণ রকমের
কান্নাকাটির শব্দে আমাদের
সবার ঘুম ভেঙ্গে গেল।
আলো জ্বালিয়ে হঠাৎ করে
খেয়াল
করলাম রাজীব নেই।
তাহলে কি আবার রাজীব…
কোনমতে সামলে নিয়ে দৌড়ে
বাইরে গেলাম। অনেক মানুষ
বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলো।
ঠেলেঠুলে সামনে গিয়ে
দেখি
রাজীব পরে আছে উঠানে।
রাজীব
আর নেই, ও মারা গেছে!
আমি চিৎকার করে উঠলাম।
আমার
বন্ধুরা সব ছুটে গেলো
সামনে।
কান্নাকাটির শব্দ বাড়তেই
লাগল। বেশ অনেকটা সময় পরে যখন
সবাই একটু ধাতস্ত হলাম
তখন
জিজ্ঞেস করলাম কিভাবে হল
এমনটা। রাজীব
মারা গেলো কিভাবে। তখন
মামা বলতে শুরু করলেন-
মাঝরাতে তিনি টয়লেটে
যাবার
জন্য বাড়ির বাইরে বের
হন। তখন
হঠাৎ দেখেন একটা বাছুর
গোয়ালের পাশ দিয়ে ছুটে
গেল।
তিনি অবাক হয়ে গেলেন,
এত
রাতে বাছুর গোয়ালের
বাইরে কি করছে! আর
তিনি নিজেই তো শোবার আগে
সব
কিছু দেখে শুনে তারপর
শুতে গেলেন। কিন্তু
তাহলে বাছুরটা কি করে
বাইরে
এলো! যাই হোক
তিনি বাছুরটা ধরতে
ছুটলেন।
অনেকটা সময় এদিক সেদিক
ছুটে তিনি শেষ পর্যন্ত
বাছুরটাকে ধরতে পারলেন,
তারপর গোয়ালের
দিকে এসে থমকে দাঁড়ালেন।
গোয়ালের দরজা পুরোপুরি
খোলা!
তখনি তার মনে সন্দেহ
জাগলো কিছু সমস্যা
হয়েছে।
তিনি তারপর
ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলেন
সবকিছু। হঠাৎ দেখেন
আমাদের
ঘরের দরজা খোলা।
তিনি ঘরে ঢুকে দেখেন
আমরা সবাই ঘুমিয়ে কিন্তু
রাজীব
নেই! রাজীব আবার কথায়
গেলো!
তিনি খুঁজতে লাগলেন।
অনেক্ষন
ধরে খুঁজে খুঁজে বাইরে
পুকুর
পাড়ে দাঁড়িয়ে
দাঁড়িয়ে ভাবতে
লাগলেন। আকাশে চাঁদ
ছিলো কিন্ত মেঘে আর
কুয়াশায়
কিছুই প্রায় দেখা
যাচ্ছিলো না।
হঠাৎ ইনি দূরে একটা শব্দ
শুনলেন, কিন্ত বুঝতে পারছিলেন
না। এদিক সেদিক
তাকিয়ে দেখেন পাশের
বাড়ির
সামাদ ভাই তাকে ডাকছে।
বললেন- কি ভাই কি হল! এই
মাঝরাতে ডাকাডাকি করছেন
যে!
সামাদ ভাই বললেন, কি জানি এক
শব্দে তার ঘুম ভেঙ্গে
যায়। চোর
মনে করে বাইরে খুঁজতে এসে
দেখেন মামা দাঁড়িয়ে
আছেন।
তাই কিছু শুনেছেন কিনা
জিজ্ঞেস
করতে ডাকা। দুজনে মিলে গল্প
করতে করতে খেয়াল করেন
পানিতে কি যেন ভাসছে।
দুজনে মিলে এগিয়ে গেলেন
সেদিকে। গিয়ে দেখেন
একটা সাদা কাপড়। ভালোমত
খেয়াল করে দেখেন একটা
মানুষ
যেন ভাসছে!
মামা ঝাঁপিয়ে পরলেন
পানিতে,
তারপর কাছে গেয়ে দেখলেন
রাজীব পানিতে উপুর
হয়ে ভাসছে। দেখেই
বোঝা যাচ্ছে সে মারা
গেছে!
কিন্ত কিভাবে! হইচই শুরু
হয়ে গেল। সবাই
এসে পরলো বাড়ির সামনে।
রাজীবের লাশটা তুলে নিয়ে যাওয়া
হলো।
কিন্তু রাজীব মারা গেলো কিভাবে! পরদিন
খবর পেয়ে রাজীবের
বাবা মা এলেন লাশ
নিয়ে যাবার জন্য। ঢাকায়
ফিরে গিয়ে ময়নাতদন্ত হল
রাজীবের লাশের। কিন্তু
কোন
কিছুই ধরা পরলো না।
সারা গায়ে অদ্ভুত কিছু
আচঁরের
দাগ ছাড়া। আর সারা
গায়ের
হাঁড়গুলো যেন কেও
ভেঙ্গে দিয়েছে।
ডাক্তাররা কেউ
ধরতে পারলো না। বেশ কদিন
তদন্ত হলো, পুলিশ এলো, কিন্তু লাভ
হল না কিছুই।
তারপর অনেকগুলো দিন
কেটে গেছে। রাজীবের
মৃত্যুর পর
সময়টা যেন একটা ঘোরের
মধ্যে দিয়ে কেটে গেছে।
প্রথম
দিকে কোন কথাই কেউ
বলতে পারতাম না, শুধু ভাবতাম
রাজীব যেন আমাদের
পাশে বসে আছে। কিন্তু…।
তারপর রাজীবের স্মৃতিও
ঝাপসা হওয়া শুরু করল।
আবার
আমাদের সময় স্বাভাবিক
হওয়া শুরু করল। আমরা
আবার
পড়াশোনায় ব্যস্ত হয়ে
পরলাম।
সেদিন আমাদের অর্ধবার্ষিক
পরীক্ষা চলছিলো। পরীক্ষা
শুরু
হয়ে গেছে কিন্তু তখনও
সূমিতের
দেখা নেই। আমাদের মাঝে
সেই
ছিল সবচে’ সিরিয়াস। কখনও
সে এক মিনিটও দেরী করতো
না।
সেই সূমিতের দেরী দেখে আমরা বেশ অবাক
হলাম। পরীক্ষা শেষ হলেও
সে আমাদের সাথে কোন
কথা না বলেই দৌড়ে চলে
গেল।
আমরা তো অবাক! এই কি সেই
সূমিত যে কিনা আগে আমাদের
পরীক্ষায় সবার উত্তর
না মিলিয়ে বাসায় ফিরতো
না,
সে কিনা আজ কোন কথা না
বলেই
পালিয়ে গেলো কেন!
বিকালেও
সে আমাদের আড্ডায় এলো
না।
কিন্তু সূমিতের হলটা কি!
সেদিন
থেকে শুরু আমাদের
এড়িয়ে চলা সূমিতের।
এভাবে অনেকদিন চলে গেলো।
একদিন সন্ধ্যায় তার বাসায়
গেলাম সবাই মিলে। তখনও
সে দেখা করতে চায় না।
কিন্তু
আমরা চাপাচাপি করাতে সে
দরজা
খুলে দিলো। ঘরে ঢুকে আমরা তো এই
মারি কি সেই মারি অবস্থা!
জিজ্ঞেস করলাম সে আমাদের
হঠাৎ করে এড়িয়ে চলা
শুরু করল
কেন। এটা ওটা অনেক কারণ
বলে গেলো সূমিত। বুঝতে পাচ্ছিলাম সূমিত
কোন
কথা গোপন করার চেষ্টা
করছে।
সূমিত কখনো ভালো মিথ্যেবাদী
ছিলো
না। কিন্তূ আমরা তখন তার
কোন
কথা শুনতে রাজী ছিলাম না।
অনেকক্ষন চুপ থেকে সূমিত
শেষ
পর্যন্ত বলা শুরু করল
ঘটনাটা।
ওই পরীক্ষার আগের দিন
রাতে সে পড়তে পড়তে
ঘুমিয়ে
পরেছিল। ভোর রাতের দিকে
কেন
যেন ঘুম ভেঙ্গে যায়
সূমিতের।
তখন সে শুনতে পায় কে যেন
কথা বলছে, সূমিত সূমিত
করে ডাকছে। প্রথমে ঘুমের
ঘোরে কিছু বুঝতে পারে না।
হঠাৎ
চমকে উঠে রাজীবের কন্ঠ
শুনে।
এমনিতেও সূমিত এসব
ব্যাপার খুব
ভয় পায়, তার উপর রাজীব তাকেই
ডাকছে। ভয়ে ভয়ে সূমিত
জিজ্ঞেস
করে রাজীবকে সে কেন এসেছে,
কি চায়। উত্তরে রাজীব
কিছু
না বলে শুধু হাসতে থাকে।
এরপর
রাজীবকে আর সূমিত দেখতে
পায়
না।
কদিন পর থেকে রাজীব আরো ঘন
ঘন সূমিতের কাছে আসা শুরু
করে।
অনেক কিছু বলতে শুরু করে।
আর
এসব কথা সে আমাদের
বলতে মানা করে। সূমিত
কারণ
জিজ্ঞেস করলে রাজীব ভিষণ
রেগে যায়। চিৎকার
করে বলতে শুরু করে- ওরা
আমার
শত্রু! ওদের কারণেই আজ
আমার এই
দশা। ওরাই আমাকে এভাবে ফেলে রেখে
চলে
এসেছে। ওদের আমি ছাড়ব
না! আর
তুই যদি বলে দিস তাহলে
তোকেও
ছাড়ব না! শুনে আমরা ভিষণ অবাক।
রাজীব
কি সত্যিই তার মৃত্যুর
জন্য
আমাদের দায়ী করে! আমাদের
ভিষণ মন খারাপ হয়ে যায়।
সূমিতকে স্বান্তনা দিয়ে
আমরা যে
যার বাড়ী চলে যাই।
আমাদের
বিশ্বাস হচ্ছিল না। আবার
না বিশ্বাস করেও থাকতে পারছিলাম না। সূমিত
আসলেই কোন দিন মিথ্যা কথা বলে ধরা না
খেয়ে
থাকে নাই। কিন্তু সূমিত যে কথাগুলো বলছিলো সেগুলো
বিশ্বাস করার মতও ছিলো
না।
এমন ভাবতে ভাবতে বেশ রাত
করে ঘুম হয় আমার। পরদিন
খুব
ভোরে ঘুম ভাঙ্গে কলিং বেল
এর
শব্দে। কে যেন পাগল হয়ে
গেছে।
বাসায় কেও ছিলো না,
তাই আমিই
ঘুম ঘুম চোখে দরজা খুলে দেখি সবাই
দাঁড়িয়ে। অবাক হয়ে
জিজ্ঞেস
করলাম কি ব্যাপার,
এমন পাগলের
মত ছুটে আসার কি দরকার,
কি হয়েছে। সবাই কোন
কথা না বলে ঘরে ঢুকে চুপ
করে বসে থাকে। কিছুক্ষন
পর
রনি বলল- সূমিত মারা
গেছে।
কাল মাঝরাত থেকে প্রচন্ড
জ্বর
উঠে সূমিতের। কেউ কিছু
বুঝে ওঠার আগেই সূমিত
কোমায়
চলে যায়। ভোরবেলা মারা গেছে ও।
সূমিত
কোমায় যাবার আগে বারবার
বিড়বিড় করছিলো- রাজীব
আমরা তোর বন্ধু, তুই অদের কিছু
করিস না…।
আমি হতভম্ভ হয়ে গেলাম।
কি হচ্ছে এসব! রাজীব কি
আসলেই
প্রতিশোধ নেয়া শুরু করল!
কিন্তু
তাও কি সম্ভব! অনেক্ষন পর
রনি হঠাৎ বলতে শুরু করে-
দোষটা আসলে তার। আমরা
কিছু
বুঝতে পারছিলাম না। এবার
কি রনিও পাগল হয়ে গেল!
রনি কাঁদো কাঁদো হয়ে
আবার
বলতে শুরু করল- আমি
রাজীবের
সাথে বাজী ধরেছিলো ওই
গাছের
নিচে সে আবার যেতে পারবে কিনা।
আমি ভেবেছিলাম রাজীব
সামলে নিবে, মজা করবে। কিন্তু
সে সিরিয়াসলি নিয়ে ঠিকই
সেরাতে আমাকে সবাই
ঘুমিয়ে গেলে ডেকে তোলে।
ধরে নিয়ে পুকুর পাড়ে
নিয়ে যায়।
তারপর সে একা একা চলে
যায় ওই
গাছটার দিকে। অনেক্ষন
ধরে দাঁড়িয়ে ছিলাম আমি।
হঠাৎ
শুনি কে যেন আর্তনাদ
করছে।
চাঁদও তখন মেঘের আড়াল
থেকে বাইরে বেরিয়ে আসে।
তখন
আমি যা দেখতে পাই তা দেখে আমার রোম
খাঁড়া হয়ে উঠে। দেখি
রাজীব
গাছের গোড়ায় অদ্ভূত ভাবে বেঁকে পড়ে আছে যেন
কেও
তাকে ধরে কাঠির মত মোঁচরাচ্ছে। রাজীব তখন
ভিষণ
জোড়ে চিৎকার করছিল। আমি
ভয়
পেয়ে বাড়ির দিকে পালিয়ে যাই। হঠাৎ
সামনে দেখি মামা
দাঁড়িয়ে
আছেন। কি করব বুঝে না উঠে আমি গোয়াল
ঘড়ের
দরজা খুলে দেই। বাছুরটা বেড়িয়ে গেলে
মামা তার
পেছনে ছুটে যায় আর আমি
সেই
ফাঁকে ঘড়ে ঢুকে শুয়ে
পড়ি।
বিশ্বাস কর আমি ইচ্ছে করে
এমন
করি নি। কি করে যে কি হয়ে গেলো
আমি
বুঝতেই পারি নি। রাজীবের
মৃত্যুর জন্য যদি কেও দায়ী থাকে সে আমি…।
বলতে বলতে রনি কান্নায় ভেঙ্গে পরলো।
আমরা আবারো হতভম্ভ
হয়ে পড়লাম। এমন সময়
হঠাৎ
লোডশেডিং হল আর সে
মূহুর্তেই
আমরা টের পেলাম কেও যেন
আমাদের পাশে হেঁটে
যাচ্ছে।
আমাদের ভিষ্ণ ভয় করছিলো।
শব্দ
শুনতে পাচ্ছিলাম না,
কিন্তু কেন
যেন হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছিলো…..এমন
সময় হঠাৎ রনি কাঁদতে কাঁদতে বলতে
শুরু
করল- রাজীব তোর মৃত্যুর
জন্য
আমি দায়ী, তুই যা করার
আমাকে কর, ওদের কিছু করিস না।
ওরা কিচ্ছু জানত না
আমাদের
ব্যাপারে। তুই ওদের ছেড়ে আমাকে নে! তখন
শুনি আমাদের রুমে কে যেন
হা হা হা! করে হাসতে
লাগল।…
জানি না কতক্ষন চলল এমন
হাসি,
হঠাৎ শুনি কেউ যেন
রাজীবের
গলা চেপে ধরেছে। সেই কন্ঠটা হাঁসফাঁস করতে
লাগল।
একসময় থেমেই গেলো। ঠিক
তখনই
শুনতে পেলাম আযান পড়ছে-
“আল্লাহু আকবার…”।
প্রতিদিন একটি করে নতুন ভুতের কাহিনি পড়তে চাইলে এখনি
লাইক দিয়ে রাখুন আমাদের ফেসবুক পেজটি …… Info world
No comments:
Post a Comment