১৪ বছরের মেয়েটির অপরাধ, সে নাকি পশ্চিমী ভাবনাচিন্তার সমর্থক। তাই সরাসরি তার মাথা ফুঁড়ে দিল তালেবান জঙ্গিদের গুলি। চার বছর আগে তালেবানের দাপটে সোয়াট অঞ্চলে মেয়েদের পড়াশোনা নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছিল। ‘তাই বলে স্কুলে যাব না?’ ভাবতে পারেনি সোয়াটের কিশোরী মালালা ইউসুফজাই। মেয়েটা চেয়েছিল,
সে আর তার বন্ধুরা পড়াশোনা করবে। তালেবানের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে এগিয়েও গিয়েছিল। যার জেরে জঙ্গিদের ‘খতম তালিকায়’ উঠে গিয়েছিল তার নামটা।
মঙ্গলবার দুপুরে সওয়া বারোটা নাগাদ ইসলামাবাদ থেকে ১৬০ কিলোমিটার দূরে সোয়াটের মিঙ্গোরায় মালালার স্কুলবাসে উঠে জঙ্গিরা দু’টি গুলি চালায় তার উপরে। গুরুতর জখম মালালাকে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও পরে বিমানে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় পেশোয়ারের সেনা হাসপাতালে। একটি গুলি লেগেছে তার মাথায়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, গুলিটা ভুরুর কাছে লেগেছে। তবে মস্তিষ্কের গভীরে ঢোকেনি। মালালার সঙ্গে জখম হয়েছে আরও দুই কিশোরীও।
তেহরিক-ই-তালিবানের পাক মুখপাত্র ইশানুল্লা ইশান ঘটনার দায় স্বীকার করে হুমকি দিয়ে বলেছে, “বয়সে ছোট হলেও সোয়াটে পশ্চিমী সংস্কৃতির প্রচার করছিল মেয়েটি। প্রেসিডেন্ট ওবামা নাকি ওর আদর্শ। তালেবান-বিরোধিতার জন্যই মালালার ওপরে হামলা চালানো হয়েছে। যদি এ যাত্রা সে বেঁচেও যায়, ফের তাকে মারার চেষ্টা করা হবে।”
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, দু’জন মাঝবয়সী লোক এসে মালালাদের স্কুলবাস থামিয়ে দেয়। বাসে উঠে অন্য মেয়েদের কাছে ওই দু’জন জানতে চায়, মালালা কে। তাকে দেখিয়ে দিতেই সঙ্গে সঙ্গে গুলি ছোঁড়ে জঙ্গিরা। গত মার্চেই তেহরিক-ই-তালিবান মুখপাত্র জানিয়েছিল, মালালা ইউসুফজাই এবং আর এক সমাজকর্মী শাদ বেগমের নাম রয়েছে তাদের খতম তালিকায়। মহিলাদের সাহসিকতার আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছিলেন শাদ। আর মালালা গত বছর ডিসেম্বরে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানির কাছ থেকে পেয়েছিল জাতীয় শান্তি পুরস্কার। সোয়াটের প্রতিকূল পরিবেশে শিক্ষা ও শান্তির প্রচারে অসম্ভব সাহসিকতার পরিচয় দেয়ায় কিশোরী ইউসুফজাইকে পুরস্কারটি দেয়া হয়।
তালেবানের শাসনে পড়াশোনা করতে না পারার যন্ত্রণা একটি বৃটিশ ওয়েবসাইটের উর্দু সংস্করণে লিখে ফেলেছিল ইউসুফজাই। “পড়াশোনা করলে তালেবান জঙ্গিরা হয়তো মুখে অ্যাসিড ছুড়বে। অপহরণও করতে পারে। এই ভয়টাই তাড়া করে আমাদের,” গুল মাকাই ছদ্মনামে লিখেছিল মালালা। বেপরোয়া মেয়েটা ভরসা দিতে বন্ধুদের। তাদের পড়াশোনা করার এতটাই আগ্রহ ছিল যে সাধারণ জামাকাপড়ে তারা ছুট দিত স্কুলে।
মালালার কথায়, “স্কুল ইউনিফর্ম পরে যেতাম না। শালের তলায় লুকিয়ে রাখতাম বই-খাতা। আমরা যে ছাত্রী, সেটা কোনও ভাবে ওদের বুঝতে দিতাম না।” ২০০৯ সালের গোড়ায় সোয়াট থেকে তালিবান হটাতে পৌঁছায় পাক সেনা। তার পর থেকে একটু একটু করে ছন্দে ফিরেছে সোয়াট। আবার পড়াশোনা করা যাবে ভেবে আনন্দের সীমা ছিল না মালালার। কিন্তু এ দিনের হামলার পর সোয়াটের নিরাপত্তা নিয়ে ফের প্রশ্ন উঠছে। বড় হয়ে আইন পড়ে দেশের রাজনীতিতে অংশ নেয়ার স্বপ্ন দেখে সাহসিনী মালালা, “এমন একটা দেশের কথা ভাবি যেখানে পড়াশোনায় কেউ বাধা দেবে না।” আপাতত হাসপাতালের লড়াই সেরে মালালার ফেরার অপেক্ষায় তার বন্ধুরা। সূত্র: ওয়েবসাইট
No comments:
Post a Comment