সন্ধ্যার পর এই নদীর ঘাটে কেউ আর আসে না। লোকে বলে এখানে এমন সময় ভূত আসে। কিন্তু, সেই বাঁধানো ঘাটে সন্ধ্যের পর রঞ্জন আসে।অফিসের দরজায় ধর্না দিতে দিতে যে এখন ক্লান্ত, বিষন্নতার তীব্র আঘাতে প্রায় অনুভূতি শূন্য। এমন লোকের কাছে আবার কিসের ভূতের ভয়! প্রতিদিন সন্ধ্যা গড়িয়ে গেলে তাকে একবার আসতেই হত এখানে।
হঠাৎ একদিন লোকশূন্য সেই ঘাটে সে লোকের সন্ধ্যান পেয়েছিলো। নিস্তব্ধ নদীর ওপার থেকে একটা নৌকাকে ওপার থেকে এপারে চলে আসতে দেখেছিলো সে। নৌকার যাত্রী বলতে একটি আট-নয় বছরের ছোট্টো ছেলে আর এক আধ-বুড়ো মাঝি। নৌকা থেকে ঘাটে নেমে রঞ্জনের দিকে তর-তর করে হেটে আসতে লাগলো ছেলেটা।
ডান হাতেএকটা চায়ের ফ্লাক্স আরবাম হাতে ফ্যাঁকাসে লালরঙের ছোট্ট একটা বালতি।বালতির ভেতর থেকে অদ্ভূত একটা শব্দ ভেসে আসছিলো। কয়েকটা কাঁচের গ্লাস আর পানি একসাথে যখন প্লাস্টিকের বালতির গায়ে আঘাত করে তখন যেমন শব্দ হয় ঠিক সেই রকম।
রঞ্জনের কাছে এসে ছেলেটি বললোঃ
-চা লাগবো স্যার?
রঞ্জন হঠাৎ-ই কৌতুকের সুরে বলে উঠলোঃ দেখি তোর পা উল্টা নাকি?
ছেলেটি কথাটায় তেমন একটা আমল না দিয়ে আবার জিজ্ঞেস করলোঃ গরম চা দেই স্যার? ভালো চা। কাপ গরম পানিতে ধুইয়া দিমু।
রঞ্জন বললোঃ নাম কি রে তোর?
- মোতালেব।
-বাহ! অনেক ভারী একটা নাম! শুনলে মনে হয় চল্লিশ-পঞ্চাশ বছরের কেউ হবে। তা তুই এই রাতের বেলায় চা বিক্রিকরতে আসলি! তাও আবার লোকনাই, জন নাই এমন এক ঘাটে?
- এই ঘাটে আইজ ই প্রথম। দেখি বিক্রি না হইলে অন্য জায়গায় যামু।
-তা, তোর বাড়ীতে কে কে আছে ?
-শুধু বুড়া নানী আসে। আম্মা মইরা গেসে, আর আব্বা আরেক বিয়া করসে।নতুন মা’য় খেদায়া দিসে।
কথাটা শুনে স্বভাবতই ছেলেটার প্রতি একটা মায়া জন্মে গেলো রঞ্জনের।
- তা ভাই মোতালেব, বানাউদেখি এক কাপ চা।
মোতালেব একরকম গদবাধাঁ পদ্ধতিতেই ছোট্টো একটা কাপে ফ্লাক্স থেকে গাঢ়রঙের এক কাপ চা ভরে রঞ্জনের হাতে তুলে দিলো।
রঞ্জন চায়ের কাপে জোড়ালো একটা চুমুক দিয়ে বললো।
- মোতালেব, তোমার পড়ালেখা করতে ইচ্ছা করেনা?
-করে। অনেক ইচ্ছা করে।
-লাভ নাই। লেখাপড়া করেকোনো লাভ নাই।
-সবাইতো উলটা কয়।
-ভূল বলে, সবাই ভূল বলে।যাক বাদ দাও। একটা গল্প শুনবা?
-আইচ্ছা কন।
-চা লাগবো স্যার?
রঞ্জন হঠাৎ-ই কৌতুকের সুরে বলে উঠলোঃ দেখি তোর পা উল্টা নাকি?
ছেলেটি কথাটায় তেমন একটা আমল না দিয়ে আবার জিজ্ঞেস করলোঃ গরম চা দেই স্যার? ভালো চা। কাপ গরম পানিতে ধুইয়া দিমু।
রঞ্জন বললোঃ নাম কি রে তোর?
- মোতালেব।
-বাহ! অনেক ভারী একটা নাম! শুনলে মনে হয় চল্লিশ-পঞ্চাশ বছরের কেউ হবে। তা তুই এই রাতের বেলায় চা বিক্রিকরতে আসলি! তাও আবার লোকনাই, জন নাই এমন এক ঘাটে?
- এই ঘাটে আইজ ই প্রথম। দেখি বিক্রি না হইলে অন্য জায়গায় যামু।
-তা, তোর বাড়ীতে কে কে আছে ?
-শুধু বুড়া নানী আসে। আম্মা মইরা গেসে, আর আব্বা আরেক বিয়া করসে।নতুন মা’য় খেদায়া দিসে।
কথাটা শুনে স্বভাবতই ছেলেটার প্রতি একটা মায়া জন্মে গেলো রঞ্জনের।
- তা ভাই মোতালেব, বানাউদেখি এক কাপ চা।
মোতালেব একরকম গদবাধাঁ পদ্ধতিতেই ছোট্টো একটা কাপে ফ্লাক্স থেকে গাঢ়রঙের এক কাপ চা ভরে রঞ্জনের হাতে তুলে দিলো।
রঞ্জন চায়ের কাপে জোড়ালো একটা চুমুক দিয়ে বললো।
- মোতালেব, তোমার পড়ালেখা করতে ইচ্ছা করেনা?
-করে। অনেক ইচ্ছা করে।
-লাভ নাই। লেখাপড়া করেকোনো লাভ নাই।
-সবাইতো উলটা কয়।
-ভূল বলে, সবাই ভূল বলে।যাক বাদ দাও। একটা গল্প শুনবা?
-আইচ্ছা কন।
-বেশ কিছুদিন আগে এই জায়গাটায় রাতের বেলাতেও মানুষ আসতো। প্রচন্ড গরমে একটু ঠান্ডা বাতাস খাওয়ার জন্য আসতো।
কিন্তু, এখন দিনের বেলায় আসলেও রাতে আর কেঊ এইখানে আসে না।বলে এখানে নাকি সন্ধ্যের পরভূত দেখা যায়। এইতো গত সপ্তাহে আমাদের পাশের বাসার লিয়াকত খান এসেছিলো। লোকটা খুব লোভী।
কিন্তু, এখন দিনের বেলায় আসলেও রাতে আর কেঊ এইখানে আসে না।বলে এখানে নাকি সন্ধ্যের পরভূত দেখা যায়। এইতো গত সপ্তাহে আমাদের পাশের বাসার লিয়াকত খান এসেছিলো। লোকটা খুব লোভী।
নিজের একটা কারখানা আছে। নিজ কারখানায় চাকরী দেবার নাম করে মানুষের কাছ থেকে টাকা নেয়; তারপর চাকরীও দেয়না আর টাকাওফেরত দেয়না। এই খানে ভূতে নাকি তাকে এক ধাক্কায় নদীতে ফেলে দিয়ে ছিলো।
কথাটা বলে রঞ্জন অট্ট হাসিতে ফেটে পড়ল। তারপরই বললঃ
-ঠিকই আছে, ব্যাটার আচ্ছা শাস্তি হয়েছে।
-তার পরে কি হইলো স্যার।
-ঠিকই আছে, ব্যাটার আচ্ছা শাস্তি হয়েছে।
-তার পরে কি হইলো স্যার।
-ও! আসলে এইখানে একটা যুবক ছেলে নদীতে ডুবে আত্মহত্যা করেছিলো। বেকার ছেলে। ভালো রেজাল্ট, অনেক ডিগ্রী। তারপরও চাকরি পায়নি। সংসারে অভাব। তার ওপর দেনা। সবার কাছে খারাপ ছেলে হয়ে গিয়েছিলো সে। এখনো মনে আছে ছেলেটা যেদিন ম্যাট্রিক পরীক্ষায় , ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় ফার্স্ট ডিভিশনে পাস করলো তখন বাসার মানুষ, প্রতিবেশী, আত্মীয় স্বজন কত না আদর করেছিলো তাকে।
কত প্রশংসাই না করেছিলো। অথচ ছেলেটা যখন চাকরী পাচ্ছিলো না, বেকার বসেছিলো দিনের পর দিন; তখন ওই মানুষ গুলোর কাছে সে খারাপ হয়ে গেলো, অপদার্থ হয়ে গেলো। সমাজের কটাক্ষ আরসহ্য করতে না পেরে ছেলেটা মারাই গেলো। বেচারা!! ঠিকই তো করেছে সে। কি বল মোতালেব?
- হ স্যার তাইলে লেখা পড়া কইরা কি লাভ!! এমনেই তো তাইলে ভালা আসি। কিন্তু, স্যার। পোলাডা কি আপনার বন্ধু আসিলো? ওরে নিয়া এতো কথা আপনি জানেন কেমনে?
প্রচন্ড হাসিতে ফেটে পড়লো রঞ্জন। সে এমন ভাবে হাসছে যেনো মোতালেব তাকে মহা নির্বোধের মত কোনো একটাপ্রশ্ন করে বসেছে।
- আমি কিভাবে জানি! এখানে আসার সময় আমি তোমাকে প্রথম যে প্রশ্নটা করেছিলাম মনে আছে? তোমাকে যে জিজ্ঞেসকরলাম তোমার পা উল্টা নাকি মনে আছে?
-হ আসে ক্যান?
-দ্যাখোতো আমার পা দুটো।
- আমি কিভাবে জানি! এখানে আসার সময় আমি তোমাকে প্রথম যে প্রশ্নটা করেছিলাম মনে আছে? তোমাকে যে জিজ্ঞেসকরলাম তোমার পা উল্টা নাকি মনে আছে?
-হ আসে ক্যান?
-দ্যাখোতো আমার পা দুটো।
মূহুর্তেই মোতালেব ভূত দর্শন করলো। সামনে জলজ্যান্ত উল্টা পায়ের একটা মানুষ, না না ভূত। হ্যা, ভূত।
- চা এর ফ্লাক্স আর আনুষঙ্গিক জিনিস পত্র হাতে নিয়ে গলা ফাটিয়েভূত! ভূত! চিৎকার করতে করতে উর্ব্ধশ্বাসে দৌড়ে পালিয়ে গেলো মোতালেব।
- চা এর ফ্লাক্স আর আনুষঙ্গিক জিনিস পত্র হাতে নিয়ে গলা ফাটিয়েভূত! ভূত! চিৎকার করতে করতে উর্ব্ধশ্বাসে দৌড়ে পালিয়ে গেলো মোতালেব।
No comments:
Post a Comment