সরকার কেবল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবে। কোনো ধর্মীয় সংগঠন বা ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করার চিন্তাভাবনা সরকারের নেই। বরং ধর্মভিত্তিক দলগুলোর সঙ্গে সরকার আলোচনা করবে।
গতকাল সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকের পর এক আলোচনায় এসব বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেকোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত ছাড়া মন্ত্রীদের কথা বলতে নিষেধ করেন। সংসদে মন্ত্রীদের কম উপস্থিতির জন্য অসন্তোষ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। বৈঠকে উপস্থিত কয়েকজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে এসব জানা গেছে।
জানা যায়, বৈঠকে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা নিয়ে কয়েকজন মন্ত্রীর আগাম বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বৈঠকে তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এমনকি আওয়ামী লীগের দলীয় ফোরামেও এ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। অথচ দিন-তারিখ দিয়ে জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার আগাম বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক সময়ে আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলামসহ কয়েকজন মন্ত্রী জামায়াতে ইসলামের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হচ্ছে বলে আগাম বক্তব্য দিয়েছেন।
বৈঠকে আলোচনা হয়, জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে সরকার আদালতের নির্দেশনার বাইরে কিছু করবে না। নির্বাহী আদেশে বা সংসদে আইন পাস করে এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত সরকার নেবে না। আদালত কী সিদ্ধান্ত দেন, সে বিষয়টা দেখে সরকার পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে। প্রধানমন্ত্রী তাঁর সহকর্মীদের বিচারাধীন বিষয়ে সংযত ভাষায় কথা বলতে বলেন। কারণ, জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা-সংক্রান্ত একটি রিট মামলা ২০০৯ সাল থেকে উচ্চ আদালতে বিচারাধীন।
জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা নিয়ে কয়েকজন মন্ত্রীর বক্তব্যের সূত্র ধরে প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে বলেন, সময়ই বলে দেবে কী করতে হবে। জনমত পর্যবেক্ষণ করুন, বাস্তবতা দেখুন।
বৈঠক সূত্র জানায়, ধর্মভিত্তিক দলগুলোকে আন্দোলনের উসকানি দেওয়ায় তিনটি পত্রিকার বিরুদ্ধে প্রেস কাউন্সিল আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে তথ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। জবাবে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, এসব পত্রিকার বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান আইনে নেই। এ ক্ষেত্রে প্রেস কাউন্সিল আইনকে যুগোপযোগী করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবকিছু আইনের দৃষ্টিতে দেখতে হবে। কোনো ব্যক্তি বা সংবাদপত্র অপরাধ করে থাকলে তার আইনগত দিক দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে নির্দেশ দেন। তবে প্রধানমন্ত্রী এ কথাও বলেন যে কিছু বিষয় আছে, যা রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে হবে।
বৈঠক সূত্র জানায়, বৈঠকে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার জন্য একজন মন্ত্রীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এ ছাড়া জামায়াতে ইসলামী যাতে ধর্ম ব্যবহার করে ফায়দা হাসিল করতে না পারে, সে জন্য মন্ত্রীদের নিজ নিজ এলাকার মসজিদ, মাদ্রাসা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের প্রধান বা ইমামদের সঙ্গে আলোচনা করার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।
No comments:
Post a Comment