সেরা দশ সেনাবাহিনী
এ তালিকাটি তৈরি হয়েছে বিভিন্ন দেশের সেনাবাহিনীর
সামরিক ইতিহাস ও পরিসংখ্যান এবং তাদের সাফল্যের ওপর ভিত্তি করে। এ ছাড়াও সেনাবাহিনীর
আয়তন বা সদস্য সংখ্যাও এক্ষেত্রে বিবেচনা করা হয়েছে।
বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর সেনাবাহিনী মানা হয় মার্কিন
যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীকে। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর আজকের রূপটি
১৭৭৫ সালের সেনাদলের সঙ্গে যুক্ত। তখন মার্কিন সেনাবাহিনী তৈরি হয়েছিল শুধু রেভ্যুলশনারি
যুদ্ধ মোকাবিলার জন্য। এরপর থেকেই তাদের সেনাবাহিনী আস্তে আস্তে প্রাতিষ্ঠানিক ও শক্তিশালী
রূপ পেতে শুরু করে। মার্কিন সেনাবাহিনী সম্ভবত বিশ্বের একমাত্র সেনাবাহিনী যেটি বিশ্বের
প্রায় সব উল্লেখযোগ্য যুদ্ধের সঙ্গে জড়িত ছিল। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে উপসাগরীয়
যুদ্ধ, দুটি বিশ্বযুদ্ধ, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বিশ্বযুদ্ধ এবং ভিয়েতনাম যুদ্ধ। এর
বাইরেও বিশ্বজুড়ে নানা অপারেশন ও ঝুঁকিপূর্ণ কার্য সম্পাদনে মার্কিন সেনাবাহিনীর জুড়ি
মেলা ভার। এ মুহূর্তে মার্কিন সেনাদলে পাঁচ লাখেরও বেশি সক্রিয় সদস্য কর্মরত রয়েছে।
তারাই বিশ্বের সবচেয়ে বড় পারমাণবিক অস্ত্রের মজুদদারি দেশ।
২. চীন
চীন কেবল বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জনবহুল দেশই নয়, বরং
সামরিক বাহিনীর সুবিশাল আয়োজনের জন্য পৃথিবীখ্যাত। সংখ্যাগত দিক থেকে চীনা সেনাবাহিনীই
বিশ্বে সবচেয়ে বড়। চীনা সেনাবাহিনীতে প্রায় দুই মিলিয়নেরও বেশি সক্রিয় সদস্য কর্মরত
রয়েছে। ১৯২৭ সালে প্রতিষ্ঠিত চীনা সেনাদল তাদের কৌশলগত ক্ষমতার জন্য বিখ্যাত। তবে
আমেরিকার সেনাবাহিনীর মতো চীনারা বিশ্বজুড়ে এত বেশি আলোচিত নয়। গত ক'বছরে চীনা সেনাদলের
সদস্য সংখ্যা কমানোর পরও তারা বিশ্বসেরা সেনাদলের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে।
৩. যুক্তরাজ্য
ইউনাইটেড কিংডম বা ব্রিটিশ সেনারা বিখ্যাত বিশ্বের
সেনাদলের তালিকায় তৃতীয় স্থানটি দখল করে আছে। ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর ইতিহাস শুরু হয় ১৬৬১
সাল থেকে। বর্তমান আধুনিক কাঠামোর মতো করে এটি তৈরি করা হয়েছিল মূলত জাতি এবং ভূমিরক্ষার
জন্য। ব্রিটিশ সেনাবাহিনী রেভ্যুলশনারি যুদ্ধে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
নেপোলিয়নীয় যুদ্ধ এবং দুই বিশ্বযুদ্ধেও তাদের সাহসী ভূমিকা ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ স্থান
দখল করে আছে। ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর মহাদেশীয় তালিকায় নিবন্ধিত এক লাখেরও বেশি সেনাসদস্য
রয়েছে।
৪. ভারত
ভারতীয় সেনাবাহিনী বিশ্বের অন্যতম সর্ববৃহৎ সেনাদল,
যার ইতিহাস একেবারে প্রাচীন প্রস্তরযুগের সঙ্গে সংযুক্ত। বর্তমানে ভারতীয় সেনাদলে ১০
লাখেরও বেশি সক্রিয় সেনা রয়েছে। বিশ্বযুদ্ধে তাদের সাহসী ভূমিকা ছিল। তাদের কৃতিত্বে
একাধিকবার স্বাধীনতা এসেছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধেও ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিশাল
অবদান রয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী একাধিকবার পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত
হয়।
৫. জার্মানি
যদিও জার্মান সেনাবাহিনীতে খুব বেশিসংখ্যক সেনাসদস্য
নিবন্ধিত নয় এরপরও তারা সেরা তালিকায় পঞ্চম স্থান দখল করে আছে। তবে জার্মান সেনাবাহিনীর
রয়েছে গর্ব করার মতো বীরত্বের ইতিহাস। জার্মান সেনাবাহিনীই ছিল দুটি বিশ্বযুদ্ধের মূল
টার্নিং পয়েন্ট। কেননা, তারাই বিশ্বের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের
মাধ্যমে জার্মানি দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায় এবং বিশ্ব মানচিত্রে পশ্চিম জার্মানি নামের
নতুন একটি দেশের জন্ম হয়। তার মাধ্যমে জার্মান সেনাবাহিনীও বিভক্ত হয়ে যায়।
৬. উত্তর কোরিয়া
আক্রমণাত্দক অভ্যাসের জন্য উত্তর কোরিয়ান সেনাবাহিনীকে
সমগ্র বিশ্বের জন্যই বিপজ্জনক মনে করা হয়। এর শুরুটা ১৯৩৯ সালে যখন উত্তর কোরিয়া দক্ষিণ
কোরিয়া থেকে আলাদা হয়। উত্তর কোরিয়ার সেনাবাহিনীতে প্রায় ১০ লাখেরও বেশি সক্রিয় সেনাসদস্য
রয়েছে। এরা সর্বদা তাদের দেশকে বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে প্রস্তুত থাকে।
৭. তুরস্ক
তুর্কি সেনাদল বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা ও সাফল্যের তালিকায়
সপ্তম স্থানে রয়েছে। এ সেনাদলের ইতিহাস প্রায় দুই হাজার বছরের পুরনো। তবে বর্তমান সময়ে
তাদের আধুনিক প্রযুক্তি ও কলাকৌশল তাদেরকে বিশ্বের অন্যতম সেরা সেনাদলে পরিণত করেছে।
এ সেনাদল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেনি, নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে। তবে তারা
কোরীয় যুদ্ধে অংশ নেয় এবং গ্রিস, ব্রিটেন, রাশিয়া, ইতালি ও ফরাসি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে
যুদ্ধ করে।
৮. রাশিয়া
যদিও রাশিয়ান আর্মি বৃহত্তম সেনাবাহিনীর ধারক দেশ
হিসেবে শীর্ষে আছে, এরপরও জনপ্রিয়তা ও পরিসংখ্যানগত দিক থেকে এদের অবস্থান অষ্টম স্থানে।
সামরিক ইতিহাস শুরু হয় ৯৬৩ সাল থেকে। তবে বর্তমানে রাশিয়া তাদের সেনাদলকে 'রাশিয়ান
গ্রাউন্ড ফোর্স' হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। আর এটি আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে ১৯৯২ সালে।
এ সেনাদল ইতিহাসে সবচেয়ে কুখ্যাত স্নায়ুযুদ্ধের সঙ্গে যুক্ত ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের পর
পারমাণবিক অস্ত্রের মজুদের দিক থেকে রাশিয়ার অবস্থান দ্বিতীয়।
৯. ইসরায়েল
১৯৪৮ সালে যাত্রা শুরু করা ইসরায়েলি সেনাবাহিনী খুব
অল্প সময়ের মধ্যেই শীর্ষ দশে নিজেদের তুলে এনেছে সাফল্য এবং বীরত্বের মাধ্যমে। ইসরায়েলি
সেনাবাহিনী গঠনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ফিলিস্তিনি আক্রমণ থেকে তাদের দেশ ও জাতিকে রক্ষা
করা। বর্তমানে ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সে এক লাখেরও বেশি সক্রিয় সেনাসদস্য কর্মরত। তারা
ফিলিস্তিন ও লেবাননের সঙ্গে একাধিকবার সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
১০. পাকিস্তান
তালিকার ১০ম স্থানটি উপমহাদেশের আরেক শক্তিধর পাকিস্তানের।
তারাও পারমাণবিক মজুদের জন্য আলোচিত। তাদের রয়েছে পাঁচ লাখেরও বেশি প্রশিক্ষিত সক্রিয়
সেনাসদস্য। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্তি পাওয়ার পর পাকিস্তান সেনাবাহিনী যাত্রা
শুরু করে। ভারত ও আফগানিস্তানের সঙ্গে পাকিস্তান আর্মির একাধিক যুদ্ধ হয়েছে। এ ছাড়াও
তারা উপসাগরীয় যুদ্ধে ন্যাটো বাহিনীর হয়ে সোমালিয়া, মোগাডিশুতে যুদ্ধ করে।
সূত্র- বাংলাদেশপ্রতিদিন।
দয়া করে আমদের পেজটিতে লাইক দিতে ভুলবেন না
No comments:
Post a Comment