Amityville অভিশপ্ত বাড়ি

১৯৭৪ সালের ১৩ নভেম্বর এখানে ২৩ বছরের এক যুবক গভীর রাতে (৩:১৫) মা-বাবাসহ পরিবারের মোট ৬ জনকে গুলি করে হত্যা করে । ১ বছর পরে ওই বাড়িতে অন্য একটি পরিবার বসবাস করতে আসে কিন্তু মাত্র ২৮ দিনের
মাথায় বাড়ি থেকে চলে যায়। তারা অভিযোগ করে বাড়ির অস্বাভাবিক/ভৌতিক ঘটনার জন্য তারা বাড়িটি ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। বাড়িটি নিয়ে বহু সিনেমা তৈরি হয়েছে এবং অজস্র বই প্রকাশিত হয়েছে । হত্যার তদন্তে অনেক প্রশ্নের জবাব পাওয়া যায়নি এবং রহস্যের জট এখনো খোলেনি । হত্যাকারীকে অনেকেই উশৃঙ্খল বখাটে যুবক হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন (যারা তাকে চিনতেন) এবং তার পক্ষে পরিবারের ৬ জন সদস্যকে হত্যা করা খুবই সম্ভব বলে মত দিয়েছেন । আবার Demonologist,সাইকিক মিডিয়াম, ধর্মযাজকদের মতে জায়গাটা অভিশপ্ত এবং অশুভ আত্মা/ পিশাচের আছর/প্রভাবের কারনেই এই দুঃখজনক হত্যাকাণ্ড ঘটেছে ।পুলিশি ও ফরেনসিক তদন্তে অনেক রহস্যই ভেদ করা যায়নি, বরং অনেক নতুন প্রশ্ন উঠে এসেছে। যেমনঃ

# কেন যুবকটি ৬ জন পরিবারের সদস্যকে হত্যা করল । হত্যাকারীর ভাষ্য অনুযায়ী ওই রাতে আপদমস্তক ঢাকা এক মহিলা তার হাতে একটি শর্টগান ধরিয়ে দিয়ে হত্যা করার নির্দেশ দেয় !

# হত্যাকারী নিস্তব্ধ গভীর রাতে ঘরে ঢুকে এক এক করে হত্যা করে । শর্টগানের গুলির শব্দ প্রচণ্ড জোরে হয় । তাহলে কেন প্রথম গুলির শব্দের পরই অন্য সদস্যরা উঠে তাকে বাধা দেয়া বা পালানোর চেষ্টা করেনি । সব মৃতব্যাক্তির লাশ তাদের বিছানায় পাওয়া যায় এবং ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের মতে মৃতদেহগুলো সরানো হয়নি, যে স্থানে হত্যা করা হয় সেই খানেই পরে ছিল । তাহলে কেন পাশের ঘর থেকে গুলির শব্দ শোনা গেলনা ? একটা কারন হতে পারে সকল কে ঘুমের ঔষধ বা মাদক প্রয়োগ করে অচেতন করে রাখা হয়েছিল । কিন্তু মৃতদেহ পরীক্ষা করে ঘুমের ঔষধ বা মাদকের কোন অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি !

# নিঝুম নিস্তব্ধ গভীর রাতেএতোগুলো গুলির প্রচণ্ড শব্দ আশেপাশের বাড়ির কেউই কেন শুনতে পেলনা ! ( ঘটনার রাতে শুধু একজন প্রতিবেশী রাত ৩-৩:৩০ এর মধ্যে ওই পরিবারের কুকুর ডাকার শব্দ শুনেছিলেন)

# হত্যাকারী কেন পালানোর চেষ্টা করেনি ? পালানোর জন্য পর্যাপ্ত সময় ছিল (বেশ কয়েক ঘণ্টা) !

ঘটনার দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু হয় যখন ১ বছর পর ওই বাড়িতে নতুন একটি পরিবার ( ছবিতে যাদের দেখা যাচ্ছে ) বাস করতে আসেন ।
নতুন মালিকের এক বন্ধু বাড়িটিতে শুদ্ধিকরন ( অশুভ প্রভাব দূরীকরণের প্রকৃয়া) পালনের জোর তাগাদা দেন । শুদ্ধিকরনের জন্য এক যাজক আসেন কিন্তু তিনি একটা ঘরে অশুভ অস্তিত্ব বুঝতে ও শব্দ শুনতে পান । তিনি ঐ ঘরটিকে বেডরুম হিসেবে ব্যবহার না করার পরামর্শ দেন । এটা প্রথম দিনেই ঘটে । মালিক প্রতিদিন রাতে ঠিক ৩:১৫ তে ঘুম থেকে জেগে উঠতেন ! ( ঠিক যেসময় হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছিল ) !
ঘুম থেকে জেগে তিনি অসস্থি বোধ করতেন এবং মাঝে মাঝে আশ্চর্য সব শব্দ শুনতেন এবং ধীরে ধীরে তিনিও রুহ্ম স্বভাবের হয়ে উঠেন । প্রায়ই স্ত্রীর সাথে তার ঝগড়া হতো । এদিকে তার স্ত্রী যখন বিভিন্ন ঘরে কাজের জন্য যেতেন , তিনিও বিভিন্ন ঘটনা দেখে আশ্চর্য হতেন এবং প্রচণ্ড ভয় পেতেন । তিনি কিছু ঘরে অনেক মাছি উড়তে দেখতেন মধ্য শীতে যা খুবই অস্বাভাবিক ! তাদের এক মেয়ের আচরণ দেখেও তারা খুব আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন। মেয়েটা তাদের বলে তার একটা বন্ধু আছে যে নিজেকে একটা বিশাল শুকর হিসেবে পরিচয় দিয়েছে ! শুকরটা কোথায় জিজ্ঞেসা করা হলে সে জানালার দিকে ইঙ্গিত করে । ওই সময় জানালায় দুটি লাল জ্বলজ্বলে বড় চোখ দেখা যায় যার থেকে আলো বের হচ্ছিল ! ক্রমেই অবস্থা খারাপ হচ্ছিল । তারা রাতে পায়ের শব্দ এবং আর্তনাদ শুনতে পেতেন । বাচ্চারাও অদ্ভুত জিনিসের কথা বলত । একদিন খুব সকালে তারা বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান এবং সেই রাতে আসলে কি ঘটেছিল তা এখন পর্যন্ত কাউকে বলেননি । তবে তারা কিছু একটা দেখে যে খুব ভয় পেয়েছিলেন এবং আতন্কিত হয়ে পড়েছিলেন তা খুব স্পষ্টই বোঝা গিয়েছিল !

ছবি দেখানো পরিবারটি পরবর্তীতে ঐ বাড়িতে বসবাস করতে আসে এবং
এর মাধ্যমে শুরু হয় বাড়িটির তৃতীয় অধ্যায় !

আগের পরিবারটি চলে যাওয়ার পর ড্যানিয়েল এবং জুলিয়ান দম্পতি এই বাড়িটিতে বসবাস করতে আসেন ! তারা খুবই সুখী দম্পতি ছিলেন ! কিন্তু এই বাড়িটিতে আসার কিছুদিনের মধ্যেই তাদের সেই হাসিখুশি জীবনে ভাটা পড়লো ! সদা হাস্যময়ী ড্যানিয়েল দিনে দিনে রুহ্ম মেজাজের অধিকারী হয়ে উঠলেন ! অকারণেই সে তার স্ত্রীর সাথে রাগারাগি করতেন ! অনেক রাতে মাতাল অবস্থায় বাড়ি ফিরতেন ! আর জুলিয়ান সবসময় কেমন বিষন্ন এবং মনমরা হয়ে থাকতেন ! তারা আশেপাশের প্রতিবেশীদের এড়িয়ে চলতে থাকেন ! পারতপহ্মে তারা বাড়িটি থেকে বের হতেন না ! নিজেদেরকে তারা ঐ বাড়িতে আবদ্ধ করে রাখতেন !

এক সকালে জুলিয়ান বাড়িতে একা ছিলেন এবং রান্নাঘরে কাজ করছিলেন ! হঠাত্‍ সে বাথরুম থেকে পানি পড়ার আওয়াজ পান ! সে অবাক হয়ে যায় ! বাড়িতে সে ছাড়া আর কেউ নেই তাহলে পানির কল ছাড়লো কে ! সে দৌড়ে বাথরুমে যান এবং দেখতে পুরো রুম পানিতে টইটুম্বুর হয়ে আছে ! সে তার স্বামীকে এই ঘটনা বললে তার স্বামী তাকে অবিশ্বাস করেন !

মূলত এরপর থেকেই নানা রকম ব্যাখ্যাতীত ঘটনা ঘটতে থাকে ! মাঝে মাঝে গভীর রাতে জুলিয়ান হঠাত্‍ই অনুভব করতেন কে যেন তার পায়ের কাছে বসে আছে ! যখন সে ঘুম থেকে জেগে উঠতেন তখন নয় / দশ বছরের একটি মেয়েকে তার পায়ের কাছে বসা অবস্থায় দেখতেন ! আবার কোন কোন দিন বিকট শব্দে গুলির আওয়াজও পেতেন ! কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এই যে সেই সময় ড্যানিয়েল গভীর ঘুমে অচেতন থাকতেন !

এইদিকে ড্যানিয়েলের অবস্থা আরও খারাপ হতে থাকে ! সে আরও বদমেজাজী হয়ে উঠে ! একদিন জুলিয়ান তাদের বেডরুম থেকে পিয়ানোর আওয়াজ শুনতে পান ! তাদের কোন পিয়ানো ছিল না তাহলে এই আসছে কোথা থেকে ! সে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে আসেন এবং দেখেন ড্যানিয়েল পিয়ানো বাজাচ্ছেন ! পিয়ানো কোথায় পেল এই কথা জিঞ্জেস করায় ড্যানিয়েল প্রচন্ড রেগে যান এবং জুলিয়ানের সাথে প্রচন্ড দূর্ব্যবহার করেন ! দিন যত যেতে লাগলো ড্যানিয়েলের পিয়ানো বাজানোর নেশা ততই বাড়তে লাগলো ! পরে দেখা গেল সে প্রায় ২৪ ঘন্টাই পিয়ানো বাজাচ্ছেন ! জুলিয়ান বুঝতে পারলেন নিজেকে এবং ড্যানিয়েলকে বাঁচাতে হলে তাদের এই বাড়ি ত্যাগ করতে হবে ! যেহেতু ড্যানিয়েল এই বাড়ি ছাড়তে রাজি হবেন না তাই সে একদিন ড্যানিয়েলের খাবারের মধ্যে ঘুমের ওষুধ দিয়ে অঞ্জান করেন এবং গভীর রাতে ঐ বাড়ি থেকে তাকে নিয়ে বের হয়ে আসেন ! ঐ বাড়ি ছেড়ে চলে আসার পর ড্যানিয়েল আবার আগের অবস্থায় ফিরে যান ! সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় এই যে ড্যানিয়েলকে তার স্ত্রীর সাথে দূর্ব্যবহারের কথা জিঞ্জেস করা হলে সে কিছুই স্মরণ করেত পারতেন না !

এই ঘটনার পর বাড়িটি নিয়ে মিডিয়া খুবই আগ্রহী হয়ে উঠে এবং অবশেষে এই বাড়িটির আসল রহস্য ভেদ হয় !

ড্যানিয়েল এবং জুলিয়ান দম্পতি Amityville এর অভিশপ্ত বাড়িটি ছেড়ে চলে যাবার পর বাড়িটির ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন মিডিয়া খুবই আগ্রহী হয়ে উঠে । এই বাড়ির ঘটনা অবলম্বনে হলি
উডে বহু সিনেমা তৈরি হয় , লিখা হয় অজস্র বই ।


New York এর TV চ্যানেল , Channel 5 ঘটনাগুলো নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরিতে হাত দেয় । Channel 5 বিশ্ব-বিখ্যাত Demonologist, সাইকিক মিডিয়াম ( অতিচেতনার অধিকারী , এরা অনেক কিছু বুঝতে পারেন । যেমনঃ অতীত , বর্তমানের গোপন ঘটনা সমাধান , ভবিষ্যত । Extra Sensory perception বা ESP তরঙ্গের মাধ্যমে এরা বহুদূরের মানুষের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন বা ঘটনা জানতে পারেন । ESP বিজ্ঞান/মনোবিজ্ঞান স্বীকৃত শক্তি যার অস্তিত্ব ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রের দ্বারা মাপা যায়) ও সাইকিক ইনভেস্টিগেটর Ed Warren ও Lorraine Warren দম্পতি কে আমন্ত্রণ জানায় Amityville এর ঘটনার তদন্তে সহযোগিতা করার জন্য । Warren ও Lorraine Warren দম্পতি যখন মিডিয়াকর্মী ও সাইকিক মিডিয়ামরা ওই বাড়িতে প্রবেশ করেন তখন অনেকেই অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করেন । ক্যামেরাম্যান Stive দ্বিতীয় তলায় যাওয়ামাত্রই বুকে ব্যাথা অনুভব করা শুরু করেন ! মিডিয়ামরা প্রচণ্ড দুঃখের অনুভূতি অনুভব করেন ! দ্বিতীয় তলায় সাইকিক মিডিয়ামরা আরও স্পষ্ট ভাবে অনুভব করেন ( যেখানে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছিল) । Mary Downey ( সাইকিক ) বলেন উপরের একটি জানালায় আমি একটি মেয়ের মুখ দেখতে পেলাম ( ছবিতে যে মেয়েটিকে দেখা যাচ্ছে ), সে আমার দিকে তাকিয়েছিল এবং কাঁদছিল । মিডিয়াকর্মীরা ওই সময় বাড়িটির অনেক ছবি ও ভিডিও চিত্র ধারন করেন । তদন্তে উপরের এই ছবিটি পাওয়া যায় যদিও ঐ সময় বাড়িতে অন্য কেউ ছিল না !
তার মধ্যে একটি ছবিতে একটি ছোট ছেলেকে দেখা যায় । যদিও ওই সময় ওই বাড়িতে অন্য কেউ ছিলনা ( ক্যামেরা , অডিও রেকর্ডার , ইলেক্ট্রো-ম্যাগনেটিক-ফ্রিকুয়েন্সি বা EMF এ ভূত/জীন/আত্মার ছবি , শব্দ , অস্তিত্ব ধরা পরে) ।
নিহত ৬ জন ছাড়াও তারা আরও অন্য আত্মার অস্তিত্ব অনুভব করেন !
পরবর্তীতে তদন্তকারীরা অন্য ধরনের মিডিয়াম ( যার মাধ্যমে আত্মাদের সাথে যোগাযোগ করা যাবে ও কথা বলা যাবে ) সহ বাড়িটিতে যান । ওই মিডিয়াম বাড়িতে প্রবেশের আগেই তিনি বলেন এখানে রেড-ইন্ডিয়ান আছে ! তদন্তের সময় কিছু আশ্চর্য ঘটনা ঘটে ! মিডিয়ামের গলার স্বর কয়েক বার বদলে যায় ও দেহভঙ্গী হাঠাত্‍ হঠাত্‍ পাল্টে যেতে থাকে ! মিডিয়াম জানান ওই স্থানে একজন রেড-ইন্ডিয়ান সর্দারের কবর ছিল ! বাড়িটা সেই কবরের উপরে করা হয়েছে , সেই কারনে সে হ্মিপ্ত ! সে চায় সবাই যেন ওই জায়গা থেকে চলে যায় !

এরপর থেকে বাড়িটি এখন পর্যন্ত পরিত্যক্ত অবস্থায়ই রয়েছে !
ইন্টারনেট থেকে সংগৃহিত
আপনাদের উৎসাহ পেলে প্রতিদিন একটি করে ভৌতিক পোষ্ট দেওয়ার চেষ্টা করব । >> আমাদের ফেসবুক পেজ এ লাইক এবং কমেন্ট করে জানাতে পারেন ।    ফেসবুক পেজ>>>> Info world