NEWS

বাংলায় তুলি প্রযুক্তির সুর

10 Mar 2013

অব্যাক্ত ভালবাসা

আজ লহরীর বিয়ে।গত একমাস ধরে তাকে সাজানোর জন্য তোরজোড় চলছে।লহরী মেডিকেল থার্ড ইয়ারের ছাত্রী।ঢাকা মেডিকেল কলেজ।কখনই এতোটা আহামরি সুন্দরী ছিলোনা লহরী।অতি সাধারণ মায়াবী মেয়ে লহরী।কিন্তু আজ তাকে এতো অপরুপা লাগছে কেন??অবশ্য গত এক মাসে লহরীকে সাজাতে বিন্দুমাত্রও ত্রুটি হতে দেয়নি অনিন্দ্য।সদ্য এম বি বি এস পাস করা অনিন্দর সাথেই লহরীর বিয়ে।ওদের Love marriage না,arrange marriage।

ডাক্তারটা কোথায় যেন লহরীকে দেখে বাবা-মা দিয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছে।লহরীর বাবা-মাতো এক কোথায় রাজী,লহরীও কিছু বলেনি।আর বলবেই বা কেন,তার তো কোন পিছুটান নেই।কি দেখে যে অনিন্দ্য লহরীর মাঝে ডুবে গিয়েছে তা লহরী বুজতে পারে না।সে লহরীকে নিয়েই ব্যস্ত।ওকে নিয়ে তার কত ভাবনা,কত কথা।এতো কিছু শুনে লহরীর খুব খুশি হওয়ার কথা।আজ তার জীবনের সবচেয়ে খুশীর দিন।কিন্তু লহরী কেন যেন খুশি হতে পারছে না।আজ স্বপ্নর জন্মদিন।প্রায় পাঁচ বছর হতে চলল স্বপ্নর কোনো খবর লহরী জানে না।

স্বপ্নর সাথে লহরীর প্রথম কথা হয়েছিল যখন সে ক্লাস ৯ এ পড়ে।হটাৎ একদিন মায়ের সেলফোনে স্বপ্নর নাম দেখে খুব কৌতূহল জন্মায় তার।কৌতূহলের বসে মিস কল দিয়ে বসে।সাথে সাথে কল ব্যাক করে স্বপ্ন।সেই থেকে শুরু।ঘণ্টার পর ঘণ্টা সেলফোনেই পার হতো তাদের,চলতো অনেক খুনসুটি।মাঝে মাঝে ছোট ছোট ব্যাপার নিয়ে ঝগড়া লেগে যেত তাদের মাঝে।সবাই তাদের ঝগড়ার বিষয় নিয়ে হাসাহাসি করত।লহরী নিজের অজান্তেই স্বপ্নর কলের জন্য অপেক্ষা করতো।এসএসসি পরীক্ষার পর লহরী বুজতে পারলো তাদের এই সম্পর্কটা তার কাছে আর শুধুমাত্র খুনসুটিতে আবদ্ধ থাকছে না।বাবা- মার একমাত্র মেয়ে লহরী প্রেম-ভালবাসার বেপারগুলো সবসময়ই অপছন্দ করতো।

বুঝতে পেরে নিজের রাশ টেনে ধরার চেষ্টা করে সে।কিন্তু বার বার হার মেনে স্বপ্নর সাথে স্বপ্ন দেখার অপেক্ষায় থাকতো সে।তবে বুদ্ধিমতী লহরীর বুঝতে দেরি হয়নি যে স্বপ্নর স্বপ্নে তার কোন স্থান নেই।তবে প্রতিক্ষণেই সে ভাবত স্বপ্ন যেন বাস্তবেই তার কাছে ফিরে এসেছে,মুখ ফুটে সে যা বলতে পারেনি স্বপ্ন তাকে তার সেই স্বপ্নের কথাগুলো বলছে।কিন্তু স্বপ্ন আজও আসেনি।লহরীর মনের সেই স্বপ্নিল কোণে আজও কেও ঠাই নিতে পারেনি।আজ এতো ঘটা করে লহরীর বিয়ে হচ্ছে,অনেক মানুষের সমাগম হয়েছে।কিন্তু লহরীর চোখ শুধু খুজে বেড়াচ্ছে স্বপ্নকে।তার স্বপ্নকে।আজও তার মনে আশা এই বুঝি স্বপ্ন চলে এসেছে,তার হাত ধরে হাঁটু গেড়ে বলছে তার স্বপ্নের কথা।সেই অদেখা,অজানা স্বপ্নের কথা যা শোনার জন্য গত পাঁচটি বছর ব্যাকুল হয়ে অপেক্ষা করছে সে।

কাজী সাহেব চলে এসেছেন।এখনই বিয়ে পড়ানো শুরু হবে।লহরীর সামনে অনিন্দ্যের আনন্দে উজ্জ্বল মুখ।ম্লান বদনে লহরীর দৃষ্টি বারবার চলে যাচ্ছে দরজার দিকে।মনের ক্ষীন আশাটা এখনও প্রদীপের মতো মিটমিট করে জ্বলছে।সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ হল।আজ থেকে লহরী মুক্ত,তার অপেক্ষার প্রহর শেষ।এরপর আর কোনোদিন একবারের জন্যও সে স্বপ্নকে দেখতে চাইবে না,তার সাথে কথা বলে মনে মনে স্বপ্নের জাল বুনবে না।

আর অনিন্দ্যও কোনদিন জানবে না লহরীর স্বপ্নগুলো এক অজানা স্বপ্ন কেড়ে নিয়ে গেছে।আজ স্বপ্নকে তার আর কিছু বলার নেই।সব কথা ফুঁড়িয়ে গেছে।স্বপ্নকে সে শুধু এইটুকুই বলতে চায়,“ভালো থেকো সপ্ন,খুজে নিয়ো তোমার স্বপ্নের মানুষকে”।মানুষ যেমন স্বপ্ন ছাড়া বাঁচতে পারে না,তেমনি লহরীও হয়তো পারবেনা স্বপ্নহীন বাকি জীবনটা পার করতে।শুধু আফসোস এই যে স্বপ্ন কখনই তা জানতে পারলো না।

═════════════════════ஜ লেখকঃ স্বপ্নচারী-




2 comments:

  1. ইয়াসমিন11 March 2013 at 06:01

    জীবন টা তো এমনি

    ReplyDelete
  2. life is complicated .

    ReplyDelete

Post Top Ad